নীরবে বাতিল হয়ে গেল সাত কোটি জন্মসনদ

0

রাজধানীর খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা ইশরাত পারভীন ২০১০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তার ছেলে আতুলা আজমের জন্ম সনদ পান। সেই সার্টিফিকেটসহ পাসপোর্ট পান। তার মেয়েও  বেশ কয়েকটি দেশ সফর করেছে। সম্প্রতি, তার স্কুল জানিয়েছে যে জন্ম ও মৃত্যু- নিবন্ধন নিবন্ধক জেনারেল অফিসের ওয়েবসাইটে অতুলার জন্ম নিবন্ধন সম্পর্কে কোনও তথ্য নেই। পরে ইশরাত নিজেই দেখেন, শুধু অতুলা নয়, পুরো পরিবারের জন্ম নিবন্ধনের কোনো তথ্য ওয়েবসাইটে নেই।

ইশরাত  বলেন, ওয়েবসাইটে কোনো তথ্য না পেয়ে খিলগাঁওয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আঞ্চলিক কার্যালয়ে যান। এখান থেকে পুরো পরিবার অনেক কষ্ট করে জন্ম নিবন্ধন সনদ পেয়েছে। কর্মকর্তারা তাকে বলেন যে তাদের জন্ম সনদ বাতিল করা হয়েছে। তারা প্রধান নগর ভবনে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। এরপর তিনি ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগে যান। সেখান থেকে বলা হয়, সবাইকে নতুন করে জন্ম নিবন্ধন করতে হবে। অন্যথায় আপনি রেজিস্ট্রার জেনারেলের অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।

ইশরাত বলেন, ‘পরে অতুলার বাবা শহীদুল আজম রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে যান। সেখান থেকে বলা হয়, এটা তাদের দায়িত্ব নয়। আপনি যাদের কাছ থেকে নিবন্ধন করেছেন তাদের কাছে যান। অন্যথায় ডিসি অফিসে যোগাযোগ করুন।

এটা শুধু এই পরিবারেই ঘটেনি। একই ঘটনা ঘটেছে দেশের অন্তত সাত কোটি মানুষের জন্ম নিবন্ধন সনদের ক্ষেত্রে।

ডিএসসিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. ফজলে শামসুল কবির  বলেন, সরকারি সিদ্ধান্তে ২০১২ সালের আগের জন্ম নিবন্ধন সনদ বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু সিটি কর্পোরেশন নয়, সারাদেশের মানুষ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে যারা পূর্বের জন্ম নিবন্ধন ব্যবহার করে পাসপোর্ট ইস্যু বা অন্যান্য কাজে ব্যবহার করেছেন তাদের চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। তাই নতুন পাসপোর্ট ইস্যু বা অন্যান্য সেবা পেতে তাদের কোনো সমস্যা হবে না।

তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফখরুদ্দিন মোবারকের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন, যিনি রেজিস্ট্রার জেনারেলের অফিসের দায়িত্বে রয়েছেন। ফখরুদ্দিন মোবারক বলেন, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের জন্য একটি নতুন ওয়েবসাইট ও সার্ভার ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর চালু করা হয়। এটি ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে পুরোপুরি চালু হয়। সে সময় গণমাধ্যমে বলা হয়, জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র পুরানো নিবন্ধনকারীদের নতুন ওয়েবসাইটে যোগ করা হবে। যদিও খুব কম লোক তা করেছিল, বেশিরভাগ লোক তা করেনি। যাদের জন্ম সনদ ছিল না তাদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে গেছে।

এ কারণে ডিএসসিসি এলাকার প্রায় ১৬ লাখ মানুষের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে বলে জানান তিনি। সারা দেশে এ সংখ্যা অন্তত কয়েক কোটি।

তবে ঠিক কত কোটি  সনদ বাতিল করা হয়েছে তা বলতে পারেননি ওই কর্মকর্তা। এখন পর্যন্ত মোট কতজন জন্ম নিবন্ধন করেছেন তা বলতে পারেননি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অতিরিক্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. ইমদাদুল হক জানান, ডিএনসিসির উদ্যোগে তারা কিছু পুরনো নিবন্ধন সনদের তথ্য হালনাগাদ করেছেন। এরপরও কয়েক লাখ সনদের তথ্য হালনাগাদ করা সম্ভব হয়নি। এখন নবায়ন করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *