আইভির সামনে পাঁচ কাজ একটি চ্যালেঞ্জ
‘সবুজ শহর, নগর গড়াই নিরাপদ’ স্লোগান নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে জয়ী সেলিনা হায়াৎ আইভীর সবুজ নগরী গড়তে বড় পাঁচটি কাজ রয়েছে। নিরাপদ নগরী গড়তে তাকেই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। নারায়ণগঞ্জ নামের সাথে জড়িত সন্ত্রাসের কুখ্যাতি নির্মূল করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জের ভোটার ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, মেয়র আইভীকে যানজট কমাতে হবে, হকার সমস্যা সমাধান করতে হবে, ফুটপাতকে পথচারীদের চলাচলের উপযোগী করতে হবে, শীতলক্ষ্যা নদীর দূষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা রোধ করতে হবে, শীত কবলিত নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য সেতু নির্মাণ করতে হবে ও শহরবাসীদের জন্য ভালো পানির ব্যবস্হা। আগের পৌরসভা ২০১১ সালে সিটি কর্পোরেশন হওয়ার পর থেকে মেয়র সেলিনা হায়াত আইভি ভোট প্রচারণায় বারবার দাবি করেছেন যে গত ১০ বছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে। অনেক কাজ চলছে।
আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু বলেন, আইভী অনেক কাজ শুরু করলেও শেষ করতে পারেননি। এগুলো শেষ করাটা একটা বড় কাজ হবে। সবুজ শহর গড়তে পর্যাপ্ত পার্ক তৈরি করতে হবে, নগরবাসী যাতে নির্মল পরিবেশে শ্বাস নিতে পারে, শহরকে দূষণমুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ (আরএইচডি) সাইনবোর্ডের মাধ্যমে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত সংযোগ সড়ককে আট লেনে উন্নীত করার কাজ করছে। এই মহাসড়কের বেশির ভাগই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সীমানার বাইরে। কিন্তু মহাসড়কের দুই পাশে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে পড়া নারায়ণগঞ্জকে দেশের অন্যতম দূষিত শহরে পরিণত করেছে। বন্দরের সিদ্ধিরগঞ্জ ও কদমরসুল এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অবস্থা বেহাল।
নির্বাচনের তিন দিন আগে সেলিনা হায়াৎ আইভীর দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্জ্য সমস্যা সমাধানে আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। নগরীর জালকুড়িতে প্রতিদিন ৬০০ টন বর্জ্য পুড়িয়ে ছয় মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের চলমান কাজ শেষ করতে হবে। কদমরসুল এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ৬০ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে।
নারায়ণগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল বলেন, মেয়রের উচিত নগরীর ফুটপাতগুলো খালি করা। শীতলক্ষ্যা নদীকে বাঁচাতে হলে তা দূষণমুক্ত করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহাবুবুর রহমান মাসুম বলেন, শহরকে যানজটমুক্ত করতে হবে। শীতলক্ষ্যা নদীর দুই তীরকে সংযোগ করতে কদমরসুল সেতুর কাজ শুরু করতে হবে।
রোববারের নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভী জয়ী হওয়ার পর পরই তিনি বলেন, তিনি চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যত দ্রুত সম্ভব কদমরসুল সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
ইশতেহারে আইভী সবুজ নগরী গড়ার স্লোগান বাস্তবায়নে বিদ্যমান খাল, পুকুর, খেলার মাঠ, পার্ক ও খোলা জায়গার উন্নয়ন, বৃক্ষ রোপণ ও বনায়নের অঙ্গীকার করেছিলেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সঙ্গে আইভীর বিরোধ অনেক পুরনো ও প্রকাশ্য। ২০১১ সালের নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন শামীম ওসমান। সুশীল সমাজের ব্যানারে একজন প্রার্থী হিসেবে লাখ ভোটের ব্যবধানে হেরে যাওয়ার পর আইভির রাজনৈতিক উত্থান ঘটে। তিনি ২০১৬ এবং ২০২২ সালের নির্বাচনেও বড় ব্যবধানে জয়লাভ করেছিলেন। এর আগে ২০০৩ থেকে আট বছর নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছিলেন আইভী।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে হেরে যাওয়া বিএনপির প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারকে আইভী ওসমান পরিবারের প্রার্থী, গডফাদার সমর্থিত প্রার্থী বলেছেন। কিন্তু ভোটে জয়লাভের পর আইভী তার বাড়িতে গিয়ে মিষ্টি খেয়ে রাজনৈতিক বন্ধুত্বের বার্তা দেন। স্থানীয় রাজনীতিতে এই বন্ধুত্ব বজায় রাখার দায়িত্বও মেয়রের। কারণ নির্বাচনে আইভী শুধু আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবেই নিজেকে উপস্থাপন করেননি, জনগণের প্রার্থী হিসেবেও উপস্থাপন করেছেন।