বাজেটে বড় ধরনের সংশোধন হচ্ছে

0

প্রতি বছর বাজেট কাটছাঁট হয়। তবে অর্থবছরের অন্তত ছয় মাস পর বাজেট সংশোধনের চিন্তাভাবনা শুরু করে সরকার। তবে এবার একটু আগেই বাজেট সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ক্ষমতা ছেড়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট দিয়েছেন ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সেখানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৫০ হাজার কোটি টাকা এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৭০ হাজার কোটি টাকা বেশি। অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বাজেট দেওয়ার সময় বলেছেন, এটি একটি অবাস্তব এবং অপ্রাপ্য লক্ষ্যমাত্রা। গত ৮ই আগস্ট ড.মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রা শুরু হয় ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই অস্থায়ী সরকার অপচয় ও অপ্রয়োজনীয় সরকারি ব্যয় রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনা করছে।

জানা গেছে, বাজেট কাটছাঁট করতে এরই মধ্যে খাতগুলো চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। চলতি অর্থবছরের বাজেট ব্যয় পরিকল্পনায় বড় ধরনের কাটছাঁট করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। আনুমানিক ব্যয় ১ লাখ কোটি টাকার মতো কম হতে পারে। তবে অপারেটিং বাজেট কমানোর সুযোগ কম। তাই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে সবচেয়ে বেশি কাটছাঁট করা হবে। চলতি মাসেই বাজেটের সংশোধনী চূড়ান্ত হতে পারে।

ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকার চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭৯৭,০০০ কোটি টাকার বাজেট ব্যয়ের প্রাক্কলন অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটের আকার যদি ১ লাখ টাকা কমানো হয়, তাহলে সংশোধিত বাজেট মূল বাজেট থেকে ১২ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি কমবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় সংশোধিত বাজেট ৬.২২ শতাংশ কমানো হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২.৫৯ শতাংশ বাজেট সংশোধন।

এডিপি প্রায় ৬৫ ​​হাজার কোটি টাকা কমছে : বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ৬৫ হাজার কোটি টাকা কমতে পারে। সরকারি ব্যয় কমানোর অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ফলে এডিপির আকার দাঁড়াবে দুই লাখ কোটি টাকা। উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে এডিপির আকার ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, বিগত সরকারের আমলে এই এডিপি প্রণয়ন করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যমান এডিপিতে অনেক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রকল্প রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার এখন আর এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে না। ফলে এখান থেকে অনেক টাকা সাশ্রয় হবে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে এডিপি প্রকল্প নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা চলছে। এসব মন্ত্রণালয়ের বিপরীতে কী কী কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে, বিদ্যুৎ ও রাস্তার মতো অবকাঠামো প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ কমানো হবে বা আটকে রাখা হবে।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এ ঋণ লাখ লাখ টাকার নিচে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মূলত এডিপি বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয়।

উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে ২৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপির মধ্যে সরকার দেবে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আর এক লাখ কোটি টাকা আসবে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান থেকে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় প্রকল্পের সংখ্যা এক হাজার ৩২১টি। এর মধ্যে ১১৩৩টি বিনিয়োগ প্রকল্প, ২১টি জরিপ প্রকল্প, ৮৭টি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প এবং ৮০টি প্রকল্প স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান/কর্পোরেশনের বাস্তবায়নাধীন।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একমাত্র বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বিদ্যমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় বাজেট সংশোধনের কোনো বিকল্প নেই। যদিও প্রতি বছর বাজেট সংশোধন করা হয়। যদিও বিগত সরকার অনেক অপ্রয়োজনীয় ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রকল্প হাতে নেয়। এ কারণে এর আগে বাজেট সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কারণ অর্থনৈতিক কাঠামো ঠিক না থাকলে বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রয়োজন নেই। কারণ টাকার অভাব রয়েছে। বাজেট সংশোধনের বিকল্প নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *