ছিল রাস্তা হয়ে গেল ভবন মুশকিল বাড়ল মানুষের

0

মূল নকশায় জায়গা ছিল রাস্তা। ওই সড়কটি প্রভাবশালীদের প্লট হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সরকার বরাদ্দ বাতিলের ঘোষণা দেয়। বরাদ্দ বাতিল তো দূরের কথা। পরে প্লটের বিপরীতে বহুতল ভবনের নকশা অনুমোদন করে রাজউক। এখন বোঝার উপায় নেই, একসময় রাস্তা ছিল। এ যেন সুকুমার রায়ের লোমহর্ষক গল্প- ‘একটা রুমাল ছিল, বিড়াল হয়ে গেল!’ আবার অসুবিধা কি? এটা সবসময়ই হচ্ছে’। অবশ্যই এটা ঘটছে। কিন্তু মানুষের জন্য এটা কঠিন হয়েছে। সড়কে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের পর সাধারণ মানুষকে এখন গন্তব্যে পৌঁছাতে অনেক পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা জটিল হয়ে পড়েছে। বেড়েছে যানজট। এছাড়া বৃহৎ অর্থে সুন্দর হাতিরঝিল তৈরির উদ্দেশ্যও ভেস্তে গেছে। আর এসবই হয়েছে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের রাস্তা বরাদ্দের কারণে। নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, নকশা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া রয়েছে। কিন্তু রাস্তাটিকে প্লট বানিয়ে বরাদ্দ দেওয়ার নিয়ম নেই। কারণ এটা জনগণের কল্যাণে। যেখানে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা জড়িত, সেখানে নকশা কেটে নাগরিক স্বার্থবিরোধী কাজ করার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, “শহরে আমাদের প্রয়োজনীয় রাস্তার অভাব রয়েছে।” রাস্তাকে প্লট বানিয়ে বরাদ্দ দেওয়া একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এক্ষেত্রে যারা এসব কাজ করেছে তাদের আইনের আওতায় আনা দরকার। রাস্তাটি প্লট হিসেবে বরাদ্দের পেছনে তাদের কী স্বার্থ ছিল তা খুঁজে বের করতে হবে। গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশের পর এক দশক আগে জনস্বার্থ আদালতে রিট করেন বিশিষ্ট আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি বলেন, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের মূল নকশা অমান্য করে খোলা জায়গায় ও সড়কে বিভিন্ন সময়ে ২১টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।সড়কে প্লট বরাদ্দের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে জনসাধারণ। তিনি আদালতে একটি রিট আবেদন করেছেন। বিষয়টি আদালতে শুনানি চলছে। সামনে আরেকটি শুনানি আছে। বিগত সরকারের আমলে তৎকালীন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এসব প্লট বরাদ্দ বাতিলের ঘোষণা দেন।কিন্তু কোনোটিই বাতিল হয়নি। উল্টো ওইসব প্লটে ইতোমধ্যে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সড়কে বহুতল ভবনের নকশা অনুমোদনের বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, কোনো সরকারি সংস্থা রাজউক এলাকায় জমি বরাদ্দ দিলে রাজউককে করতে হবে না। তবে সরকার সিদ্ধান্ত নিলে রাষ্ট্রের স্বার্থে যে কোনো সময় বরাদ্দ বাতিল করা হতে পারে। জানা গেছে, পঞ্চাশের দশকে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় প্লট সাজিয়ে পরিকল্পিত শিল্প এলাকা তৈরি করে তৎকালীন গণপূর্ত বিভাগ ব্যবসায়ীদের মধ্যে বরাদ্দ দেয়। সেখানে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল। নকশায় শিল্পাঞ্চলের প্রধান সড়কগুলোর প্রস্থ ছিল কমপক্ষে ৬০ ফুট। তাজউদ্দীন আহমদ সরণি থেকে লাভ রোড হয়ে হাতিরঝিল, শিল্পাঞ্চলের তেজগাঁও থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং জাতীয় নাক কান ও গলা ইনস্টিটিউট সংলগ্ন ১৩৬ ও ১৩৮ নম্বর প্লট পর্যন্ত ৬০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা ছিল। একইভাবে আরেকটি সড়ক ১২২ ও ১৩৫ নম্বর প্লটের মাধ্যমে হাতিরঝিলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু হাতিরঝিল আধুনিকায়নের আগে ওই সড়কে অস্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বসতি গড়ে তোলেন কয়েকজন। গণপূর্ত অধিদপ্তর কখনো তাদের উচ্ছেদ করেনি। জানা গেছে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সড়ক দুটিতে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়।সাবেক বিএনপি নেতা জিয়াউল হক জিয়া, মেজর (অব.) কামরুল ইসলাম, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও কামাল উদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ীকে প্লট দেওয়া হয়েছে। আরেকটি প্লটের বর্তমান মালিকরা হলেন সাবেক বিএনপি নেতা এম মোরশেদ খান ও আরেক ব্যবসায়ী। বরাদ্দপ্রাপ্তরা গণমাধ্যমকে জানান, তারা প্লটের জন্য আবেদন করেছেন। সরকার তাদের প্লট দিয়েছে। তাই এ ব্যাপারে বরাদ্দকারীদের কোনো দায় নেই। রাস্তাটি প্লট হিসেবে বরাদ্দ না হলে তাজউদ্দীন আহমদ সরণি থেকে লাভ রোড হয়ে মানুষ সরাসরি হাতিরঝিল যাওয়ার সুযোগ পেত। হাতিরঝিলের সঙ্গে যোগাযোগের সুবিধার্থে সম্প্রতি রিং রোডের ১২৭ ও ১৬৩ নম্বর প্লট সংলগ্ন এবং হাতিরঝিলের সঙ্গে যুক্ত একটি রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নকশা রোডের ১৩৬ নম্বর প্লটের পাশে নতুন বরাদ্দকৃত ১৩৬/১ নম্বর প্লটটিতে একটি বিদেশি গাড়ি কোম্পানির সার্ভিসিং সেন্টার ও ওয়ার্কশপ রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *