কোণঠাসা জঙ্গিরা অনলাইনে সক্রিয়

0

২০১৬ সালের ১লা জুলাই রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ হামলার পর, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারাবাহিক কঠোর অভিযান জঙ্গি তৎপরতা হ্রাস করেছে। দেয়াল লিখন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঙ্গিদের সরাসরি তৎপরতা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু জঙ্গিরা এখন অনলাইনে সক্রিয়। ছোট ছোট গোপন দলে বিভক্ত হয়ে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গত ছয় মাসে অনলাইনে সক্রিয় অর্ধশতাধিক জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তবে নিহত জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির ও মো. আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব নামে দুই জঙ্গিকে ১৯ মাস পেরিয়ে গেলেও গ্রেপ্তার করা যায়নি। জঙ্গি নেতা মেজর জিয়াও নিখোঁজ। এছাড়া মুক্তিপ্রাপ্ত জঙ্গিদের পর্যবেক্ষণে দুর্বলতা নাশকতার সুযোগ তৈরি করতে পারে। গোয়েন্দা সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদন এবং অপরাধ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হলি আর্টিসানে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর সরকারের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নড়েচড়ে বসেছে। জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ ও জঙ্গিদের পথ দেখাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালু করা হয়। এ ছাড়া জঙ্গিবাদে জড়িত তরুণদের মনস্তাত্ত্বিক কাউন্সেলিং-এর মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অব্যাহতভাবে কাজ করছে। ধর্মীয় পুরোহিত, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদ, আইন উপদেষ্টা এবং মনোবিজ্ঞানীদের মাধ্যমে কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। বাংলাদেশ এর সুফল পেতে শুরু করেছে। জঙ্গিবাদের অবসান না ঘটলেও জঙ্গি সংগঠনগুলো বড় আকারের হামলা চালানোর ক্ষমতা হারিয়েছে।

জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করা গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গিদের শারীরিক কার্যকলাপ নেই। তারা অনলাইনে সক্রিয়। অনলাইনে একে অপরের সাথে প্রশিক্ষণ মডিউল শেয়ার করা। নতুন সদস্য নিয়োগের চেষ্টা চলছে। কিন্তু বড় আকারের হামলা চালানোর সক্ষমতা কোনো জঙ্গি সংগঠনের নেই। গত কয়েক বছরে জঙ্গিরা বড় কোনো হামলা চালাতে পারেনি। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে জঙ্গিবাদে বাংলাদেশের অবস্থান প্রতিবছরই ভালো হচ্ছে। নব্য জেএমবি একটি বড় অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। আনসার আল ইসলামের কার্যক্রমও শুধুমাত্র অনলাইন।

কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জঙ্গিবাদে জড়িতদের মধ্যে ৬৮ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ৩৪ বছরের মধ্যে। আর ৮২ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়িত।

হলি আর্টিসানে হামলার বিষয়ে সিটিটিসি প্রধান বলেন, হলি আর্টিসানে হামলার ঘটনায় সিটিটিসি তদন্ত শেষ করেছে। অভিযানে জড়িত পাঁচ মাস্টারমাইন্ড নিহত হয়। পরে এ হামলার মূল পরিকল্পনাকারী আটজনকে জীবিত গ্রেপ্তার করা হয়। ওই মামলায় সাতজনকে ফাঁসি এবং একজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন আসামিরা। ওই রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট।

তারা সাইবার স্পেসে বেশি সক্রিয়। তাদের নিয়োগ, প্রচারণা এবং প্রশিক্ষণ সবই সাইবারস্পেসের উপর নির্ভরশীল। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও সাইবারস্পেসে কাজ করছে। সার্বক্ষণিক অনলাইন নজরদারি চলছে, সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে অভিযানও চলছে।

২০২২ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতের সামনে থেকে সন্ত্রাসী মাইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির ও মোঃ আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবকে অপহরণ করে জঙ্গিরা। এ ঘটনায় ২০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে দুইজন পলাতক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *