এই প্রথম রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে, আইএমএফ ঋণের শর্তাবলী

0

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সহ কয়েকটি দাতা সংস্থার ঋণ এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ভিত্তিতে চলতি অর্থ বছরের (২০২৩-২৪) শেষ দিনে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, দেশের মোট রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এবং আইএমএফ -এর অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম বিপিএম ৬ অনুযায়ী, গ্রস রিজার্ভ প্রায় ২২ বিলিয়ন। এর বাইরে নেট বা প্রকৃত রিজার্ভ ১৫ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ আইএমএফের ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির আওতায় নেট রিজার্ভ রাখার লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, ৩০ জুন অর্থবছর শেষে দেশের নেট রিজার্ভ ১৫ বিলিয়ন ডলারে থাকবে। এর আগে টানা চার প্রান্তিকে নিট রিজার্ভ রাখার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত বৃহস্পতিবার, আইএমএফ ঋণের তৃতীয় কিস্তির ১১৫ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। ওই দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে এই টাকা যোগ হয়। একই দিনে, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং কোরিয়ার কাছ থেকে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলারও রিজার্ভে যোগ করা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের মোট রিজার্ভ বৃদ্ধির পাশাপাশি নেট রিজার্ভও বেড়েছে।

নেট রিজার্ভ হল অনাদায়ী মজুদ। আইএমএফ -এর এসডিআর সেক্টর, ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে রাখা ডলার এবং এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (আকু) বিলের জন্য রাখা ডলার বাদ দিয়ে নেট রিজার্ভ গণনা করা হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশ করে না। আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থাকে এই তথ্য দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্ত হিসেবে বাংলাদেশকে সময়ে সময়ে কী পরিমাণ নেট রিজার্ভ রাখতে হবে তা নির্ধারণ করে আইএমএফ। তদনুসারে, আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী প্রতি তিন মাস পর রিজার্ভ বজায় রাখতে হবে। সূত্রমতে, ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কার্যক্রম শুরুর পর গত চার প্রান্তিকে আইএমএফ কর্তৃক নির্ধারিত নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। এ কারণে আইএমএফ বাংলাদেশের অনুরোধে বারবার শর্ত শিথিল করেছে এবং আগের কিস্তির অর্থ ছাড় করেছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মাজবাউল হক বলেন, গত বৃহস্পতিবার আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তি আসায় আরও কয়েকটি উৎস থেকে রিজার্ভে ডলার যোগ হয়েছে। এ ছাড়া প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস রিজার্ভ বেড়ে ২৭ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। তবে তিনি বিপিএম ৬ অনুযায়ী মোট ও নেট রিজার্ভের তথ্য দেননি।

বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের মধ্যে বাংলাদেশ ২০২২ সালের জুলাই মাসে আইএমএফ থেকে ঋণের জন্য আবেদন করে। সেই আবেদনের ছয় মাস পর গত বছরের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফ ৩৮ শর্তে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করে। এনহ্যান্সড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ), এনহ্যান্সড ফান্ডিং ফ্যাসিলিটি (ইএফএফ) এবং রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) নামে তিনটি পৃথক প্রোগ্রামের অধীনে আইএমএফ কর্তৃক ঋণটি মঞ্জুর করা হয়েছিল। ঋণ অনুমোদনের সময় দাতা বলেন যে শর্ত পূরণ সাপেক্ষে ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাত কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করা হবে। এ পর্যন্ত তিনটি কিস্তি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৪৭.৬৩ মিলিয়ন ডলারের প্রথম কিস্তি পেয়েছিল গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *