নদীতে পানি স্বল্পতা কর্ণফুলী পেপার মিলের উৎপাদন ব্যাহত
কাপ্তাই উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা কমে গেছে। নদীতে পানি কমের প্রভাব সর্বত্র। এই নদীর উপর নির্ভর করে চন্দ্রঘোনায় কর্ণফুলী পেপার মিল ও অন্যান্য শিল্প গড়ে ওঠে। বর্তমানে নদীতে কম পানির স্বল্পতার প্রভাব পড়েছে কর্ণফুলী পেপার মিল (কেপিএম)।
কেপিএমের দায়িত্বে থাকা একটি সূত্র জানায়, বোরিছড়ির ওয়াগ্গা পাম্প হাউসে কারখানায় পানি সরবরাহের জন্য যে মোটর বসানো হয়েছে তার গোড়ায় পানি কম থাকায় পানি পাচ্ছে না। যার কারণে কেপিএমে নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
কেপিএম ওয়াটার পাম্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল হোসেন মিয়া কর্ণফুলী নদীতে পানি কম থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, কাগজ উৎপাদনে কারখানায় ঘণ্টায় আড়াইশ লিটার পানি প্রয়োজন। কিন্তু মোটরের মুখে সব সময় পানির স্তর না থাকায় নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহ সম্ভব হয় না। ফলস্বরূপ, কেপিএম প্রায়ই উত্পাদন বন্ধ করতে হয়। কাগজ উৎপাদন বন্ধ করা ছাড়াও কেপিএম আবাসিক এলাকায় নিয়মিত পানি সরবরাহ করা হচ্ছে না। ফলে আবাসিক এলাকায় বসবাসকারী পরিবারগুলোও পানি সংকটে ভুগছে।
এদিকে কর্ণফুলী নদীতে পানি কমে যাওয়ায় নির্বিঘ্নে নদী পারাপার সম্ভব হচ্ছে না। সম্প্রতি পানি কমে যাওয়ায় লিচুবাগান ফেরি ঘাটে ফেরি চলাচলও বন্ধ রয়েছে। নদীর ওপর দিয়ে যত্রতত্র সাম্পান চালানোও কঠিন হয়ে পড়ছে। সাম্পান মাঝি আরব আলী জানান, ঘাটের পানি অনেক নিচে নেমে গেছে। ফলে ঘাটের খুব কাছে সাম্পান ভিরানো যাচ্ছে না। ফলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে নৌ যাত্রীদেরও।
কর্ণফুলী নদী ছাড়াও কাপ্তাই হ্রদেও পানি আশঙ্কাজনক হারে কমেছে বলে সূত্র জানায়। কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এটিএম আবদুজ্জাহ কাপ্তাই হ্রদে পানি কম থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, কাপ্তাই লেকে রুল কার্ভের তুলনায় ১০ ফুটের বেশি পানি রয়েছে। লেকে পানি কম থাকায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব ইউনিট একসঙ্গে চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
রাঙামাটি সড়ক ও গণসড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা জানান, নদীতে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক না থাকায় লিচুবাগানে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। আগামী ১০ মার্চ থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত ৪ দিন কর্ণফুলী নদীতে ফেরি চলাচল বন্ধ করে নদীতে ড্রেজিং করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ সময় বিকল্প রুট ব্যবহার করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ড্রেজিং শেষ হলে এবং পানি প্রবাহ স্বাভাবিক হলে লিচুবাগানে ফেরি চলাচল শুরু হবে।
স্থানীয় সাধারণ জনগণ ও বিভিন্ন যানবাহন চালক ও সাম্পান নাবিকরা জানান, শুধু লিচুবাগান অংশে ড্রেজিং করে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। এ জন্য পুরো কর্ণফুলী নদী ড্রেজিংয়ের আওতায় আনা প্রয়োজন।