আন্দোলনের গতি বাড়াচ্ছে বিএনপি, আসতে পারে ঘেরাওয়ের কর্মসূচি

0

সরকারবিরোধী আন্দোলনকে বেগবান করতে কর্মসূচি পরিবর্তন করতে যাচ্ছে বিএনপি। আগামী অক্টোবরের মধ্যে আন্দোলনকে কাঙ্খিত রূপ দিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, দলের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আদালতকেন্দ্রিক কর্মসূচি প্রণয়ন করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিএনপির তিনটি সংগঠনের অন্যতম ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে যুব রোড মার্চ শুরু হতে যাচ্ছে।

গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচিতে কাঙ্খিত সাফল্য না পাওয়ায় ওইদিন চারটি প্রবেশপথে বড়সড় সমাবেশ করতে পারেনি দলটি। এরপর প্রায় দুই সপ্তাহ কর্মসূচি থেকে বিরতি নেন দলের শীর্ষ নেতারা। ১১ আগস্ট গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে কর্মসূচিতে ফিরেছে দলটি।

বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা জানিয়েছেন, অক্টোবরের মাঝামাঝি চূড়ান্ত আন্দোলনের শেষ পর্বের কর্মসূচি শুরু করতে চান তারা। সে কারণে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে পাল্টে যাচ্ছে আন্দোলনের ধরন। গণমিছিল-মিছিলের পরিবর্তে আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে আলোচনা চলছে।

গত ৪ সেপ্টেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে আদালত কেন্দ্রিক কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।

এ পর্যায়ে সুপ্রিম কোর্ট থেকে জেলা জজ আদালত পর্যন্ত অবস্থান ধর্মঘট ও বিক্ষোভের মতো কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকের আগের দিন ৩ সেপ্টেম্বর দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে কঠোর কর্মসূচিরও পরামর্শ দেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক সিনিয়র নেতা বলেন, আদালতকেন্দ্রিক কর্মসূচি ও দলের তিন সহযোগী সংগঠনের রোডমার্চের পর আবারো ঢাকায় সাধারণ সভা ডাকা হতে পারে। এরপর পুলিশ সদর দপ্তর, ডিএমপি কার্যালয়, সচিবালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এমনকি ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি নিয়েও দলের মধ্যে আলোচনা চলছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আছি।

রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে কর্মসূচির পরিবর্তন হতে পারে। তবে গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আমরা গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে থাকব।

সংগঠনের দুর্বলতা কাটিয়ে নতুন কমিটি

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনে গতি ফিরিয়ে আনতে নতুন কর্মসূচির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সে জন্য ঢাকায় প্রবেশ কর্মসূচিতে যেসব দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে এসব সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আরও কিছু সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের কমিটিতে রদবদল, ঢাকা মহানগর যুবদল ও যুবদলের নতুন পুলিশ ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি করা হয়েছে। সমবায় সংগঠনের জেলা ও মহানগর পর্যায়ে একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে।

দলটির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান রোববার আদালতে হাজির হয়ে দুর্নীতির মামলায় সাজা পেয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ মামলায় শিগগিরই তার জামিন পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তার স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন নতুন কাউকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু কারাগারে রয়েছেন। মজনুরের জায়গায় তানভীর আহাদ রবিনকে ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব করার পর তাকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। যোগ্য নেতাকে ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথা ভাবছেন দলের শীর্ষ নেতা।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সাংগঠনিক রদবদল ও নতুন কমিটি গঠন নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রমের অংশ। দীর্ঘদিন ধরে সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছিল। এরই ধারাবাহিকতায় চলছে কমিটি গঠন-পুনর্গঠন।

রোডমার্চ যাবে ৫টি বিভাগে

বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের সূত্র জানায়, ১৬ সেপ্টেম্বর রংপুর থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত রোডমার্চের মাধ্যমে কর্মসূচি শুরু হবে। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর বগুড়া থেকে রাজশাহী, ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব থেকে সিলেট, ২১ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহ থেকে খুলনা পর্যন্ত রোডমার্চের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হবে। ২৬ এবং কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম ৩০ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত হয়েছে।

দলটির নেতারা জানান, ‘ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তরুণদের রোডমার্চ’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। একই দাবিতে গত জুন-জুলাইয়ে দেশের সব সাংগঠনিক বিভাগে যুব সমাবেশ করে তিনটি সংগঠন। তবে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা সমাবেশে কর্ণপাত না করায় দলের ভেতরে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু বলেন, আগামী দুই-একদিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *