জাহাজ ভাঙায় গতি ফিরেছে, রডের দাম কিছুটা কমেছে
বিদেশ থেকে পুরনো জাহাজ আমদানি ও স্ক্র্যাপিং গতি পেয়েছে। বিলাসবহুল পন্য আমদানির লেটার অব ক্রেডিট খোলার ক্ষেত্রে কঠোরতা, লেটার অব ক্রেডিট খুলতে ব্যাংকে ডলারের ঘাটতি, ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধিসহ নানা কারণে পুরনো জাহাজ আমদানিতে ধস নেমেছে। ফলে প্রতি টন লোহার দাম লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এরপর চলতি বছরের শুরু থেকে কঠোরতা কিছুটা শিথিল হলে ঋণপত্র খোলা শুরু হয়।
পুরনো জাহাজের আমদানি বাড়ছে। ব্যস্ত হতে শুরু করেছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের শিপব্রেকিং ইয়ার্ডগুলো। তবে আমদানি স্বাভাবিক হয়নি।
চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টমস, শিপব্রেকিং অ্যাসোসিয়েশন ও শিপব্রেকিং প্লাটফর্ম সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে পুরনো বা স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি বেড়েছে।
একইভাবে স্ক্র্যাপ বা লোহার টুকরা আমদানিও বেড়েছে। ফলে কলকারখানাগুলো গতি পেতে শুরু করে।
শিপব্রেকিং অ্যাসোসিয়েশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে ১৬৫টি জাহাজ ভাঙা হয়েছে। এর বিপরীতে লোহা পাওয়া গেছে ১০ লাখ ৪৫ হাজার টন।
আগের অর্থবছর ২০২১-২২-এ এর পরিমাণ ছিল প্রায় ১৮ লাখ টন। আর ওই অর্থবছরে ২০৯টি জাহাজ ভাঙ্গা হয়েছে।
এবং বাংলাদেশে ২০২৩ সালের জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত ছয় মাসে শিপ ব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের গতি বেড়েছে। এই সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ২০০টি পুরানো জাহাজ ভেঙ্গে হয়েছে; বিপরীতে বাংলাদেশে ভেঙেছে ৯০টি। তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ।
শতকরা হিসাবে দেখা যায়, বাংলাদেশের জাহাজের ৪৫ ভাগ ভেঙেছে। ৬১টি জাহাজ ভেঙে ভারত তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে; শতাংশের হিসাবে সাড়ে ৩০ শতাংশ। এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন, তৃতীয় স্থানে, ৩২টি জাহাজ ভাঙ্গা হয়েছে, যা ১৬ শতাংশ।
সুদিনের প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গে পিএইচপি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল ইসলাম রিংকু বলেন, “শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডগুলো দেশের মোট লোহার চাহিদার ৩০-৪০% জোগান দেয়। ফলে জাহাজের আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরবরাহও বাড়ে। সরবরাহ বাড়লে লোহার দামও সহনীয় হবে।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের জিডিপি ৭ শতাংশ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সত্ত্বেও ৬ শতাংশ বেড়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে লোহার চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এই চাহিদা মেটাতে ঋণ খোলার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে হবে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে স্ক্র্যাপ জাহাজ এসেছে ৯ লাখ ৭১ হাজার টন। বিপরীতে রাজস্ব পেয়েছে ১৪৫ কোটি টাকা। ২০২১-২২ সালে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি ছিল ১৮ লাখ ৮৩ হাজার টন; বিপরীতে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ২৭৪ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, ক্রেডিট সংকটের কারণে পুরনো জাহাজ না আসায় ২০২৩ সালের মার্চ মাসে প্রথমবারের মতো ৬০ গ্রেডের এমএস রডের দাম ১ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এরপর সরকারি উন্নয়ন অবকাঠামোর কাজে স্থবিরতা দেখা দেয়।
এ সময় রডের দাম বাড়ার পেছনে তিনটি বড় কারণ বলে জানান ব্যবসায়ীরা। একটি হলো ক্রেডিট সংকটের কারণে স্ক্র্যাপ বা পুরাতন জাহাজের আমদানি সম্পূর্ণভাবে কমে গেছে। দ্বিতীয়ত, ডলারের উচ্চ বিনিময় হার এবং তৃতীয়ত, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি। কিন্তু এখন জাহাজ আমদানি বেড়েছে, ঋণ সংকট কেটে গেছে। তবে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এ অবস্থায় দাম কমবে কিনা জানতে চাইলে ইস্পাত উৎপাদনে শীর্ষে থাকা একটি গ্রুপের একজন কর্মকর্তা বলেন, “আমদানি বাড়লেও বিক্রি কমেছে। বন্যার কারণে আগস্টে চাহিদা ও বিক্রি দুটোই কমেছে। ফলে দামও কমেছে টনপ্রতি ৯৪ হাজার টাকা।আমার মনে হয় দাম একই থাকবে।এর কম নয়।তবে সরবরাহে ঘাটতি থাকলে দাম আবারও বাড়তে পারে লাখ টাকা ।