বিমানবন্দর-ফার্মগেট ১০ মিনিটে।শনিবার খুলছে এক্সপ্রেসওয়ে
আর মাত্র একদিন। রাজধানীর যানজট নিরসনে মেট্রোরেলের পর চালু হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। আগামী শনিবার প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হবে। প্রথম পর্যায়ে প্রকল্পের বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অংশ চালু করা হচ্ছে। যানজটের যন্ত্রণায় ভুগতে থাকা নগরবাসীকে এ খবর অনেকটা স্বস্তি এনে দিয়েছে। তবে যানবাহন দ্রুত অন্য দিকে গিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে নেমে যানজট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেটে পৌঁছাতে নগরবাসীকে মাঝে মাঝে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসে বসে গরমে নাস্তা খেতে হয়। এখন মিনিটের মধ্যেই পৌঁছানো যায়। এক কথায় আরেকটি গতির ছোঁয়া মিলবে এই উদ্ধোধনের মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন।
২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রকল্পের বিনিয়োগকারী ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে সেতু কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের পর নগরবাসী নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। বেসরকারি-সরকারি অংশীদারিত্বের এ প্রকল্পের আওতায় বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হয়েছে। ৩১টি র্যাম্প সহ এর মোট দৈর্ঘ্য ৪৬.৭৩ কিলোমিটার।
ইতিমধ্যে পুরো প্রকল্পের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের প্রায় ১০০% কাজ শেষ হয়েছে। এই বিভাগে এক্সপ্রেসওয়ের জন্য ১৫টি র্যাম্প রয়েছে। প্রথম ধাপে ১৩টি র্যাম্প খোলা হবে। তাদের সঙ্গে যানবাহন চলাচল করতে পারে।
যে বিন্দুতে ওঠানামা করা যায়
বিমানবন্দরের দুটি র্যাম্পের মধ্যে একটি এক্সপ্রেসওয়েতে প্রবেশ এবং প্রস্থান করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। কুড়িলে বোর্ডিংয়ের জন্য তিনটি র্যাম্প রয়েছে। এগুলোও প্রথম দিন থেকে খোলা থাকবে। মহাখালীতে দুটি র্যাম্পের একটি মহাখালী বাস টার্মিনালের কাছে নামানো যেতে পারে। কিছুদিন পর আরেকটি র্যাম্প চালু হবে। এছাড়া বিজয় সরণি ফ্লাইওভার থেকে এক্সপ্রেসওয়ে পর্যন্ত দুটি র্যাম্পও প্রাথমিকভাবে খোলা থাকবে। ফার্মগেটে তেজগাঁও কলেজের সামনে দিয়ে শেষ র্যাম্পটি নেমে যাবে। এক্সপ্রেসওয়ের গতি প্রতি ঘন্টায় ৮০ কিমি। তবে প্রথম ধাপে গতি নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ কিলোমিটার। পুরো রুটটি ১০ মিনিটে কভার করা যায়।
এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামী বছরের জুনের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। তারপর বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কুতুবখালী যাওয়া যাবে গাড়িতে। একইভাবে কুতুবখালী থেকে বিমানবন্দরে যেতে পারেন। যেসব যানবাহন এখন পর্যন্ত নগরীর ব্যস্ত এলাকা দিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করত সেগুলো কাজ শেষ হলে আর নগরীর যানজটের সম্মুখীন হতে হবে না। আপনি সহজেই এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ভ্রমণ করতে পারেন।
কোন গাড়ির টোল কত?
প্রাইভেট কার, ট্যাক্সি, জিপ, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকল, মাইক্রোবাস (১৬ আসনের কম) এবং হালকা ট্রাক (৩ টনের কম) ভ্যাটসহ ৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাঝারি ট্রাকের জন্য (৬ চাকার পর্যন্ত) ৩২০ টকি। ৬ চাকার বেশি চাকার ট্রাক বা ট্রেইলরের জন্য ৪০০। আর সব ধরনের বাসের (১৬ আসন বা তার বেশি) টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬০ টাকা। তবে এক্সপ্রেসওয়েতে কোনো নন-মেকানিক্যাল যানবাহন, মোটরবাইক, থ্রি-হুইলার বা সিএনজি অটোরিকশা চলতে দেওয়া হবে না। এক্সপ্রেসওয়েতে কেউ পায়ে হেঁটেও যাতায়াত করতে পারবে না। অবশ্য এতে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ও সাধারণ পথচারীরা খুবই নাখোশ। তারা বলছেন, রাজধানীতে চলাচলকারী ২০ লাখ যান্ত্রিক যানের মধ্যে ১০ লাখ মোটরসাইকেল। এর বাইরে লাখ লাখ সিএনজি অটোরিকশা রয়েছে। এই বিপুল সংখ্যক যানবাহনকে এক্সপ্রেসওয়ে সুবিধার বাইরে রাখলে যানজট নিরসনের অনেকটাই উদ্দেশ্য অপূর্ণ থেকে যেতে পারে।
গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হক এ প্রসঙ্গে বলেন, যানজট কমাতে অফ-পিক ও পিক আওয়ার হিসাব করে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা করতে হবে। অফিসের সময় যখন যানজট বেশি থাকে, তখন অনেক যানবাহন এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু রাত ১০টার পর যখন মহাসড়ক ফাঁকা থাকে, তখন হয়তো অনেকেই গাড়ি চালাবেন। এ জন্য অফ-পিক ও পিক-আওয়ার হিসেবে টোলের হার নির্ধারণ করা গেলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। সিএনজি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের বিষয়টিও পুনর্বিবেচনা করা দরকার। এ ছাড়া গণপরিবহন বিশেষ করে বাসগুলো নিচ থেকে যাত্রী নিয়ে যায়। এক্সপ্রেসওয়েতে তারা যাত্রী পাবে কোথায়? এ ক্ষেত্রে বাসগুলোকে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হতে পারে।
যানজটের নতুন ভয়
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে যানবাহন দ্রুত অন্য প্রান্তে গিয়ে যানজটের সৃষ্টি করতে পারে। এসব পয়েন্টে যানজট নিরসনে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ কাজী সাইফুল নেওয়াজ বলেন, ওইসব পয়েন্টে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিতে হবে। তা না হলে যানজট নিরসনের লক্ষ্য পূরণ হবে না।
এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের ৫১ শতাংশ, চীন ভিত্তিক কোম্পানি শানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপের ৩৪ শতাংশ এবং সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেডের ১৫ শতাংশ অংশীদারিত্ব নিয়ে নির্মিত হচ্ছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা।