সরকারি তালিকা অনুযায়ী ঈদে বাস ভাড়া দ্বিগুণ

ঢাকা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে সরকারি নির্ধারিত বাস ভাড়া ৮৯৫ টাকা। এই রুটে রজনীগন্ধা পরিবহনে ৪০০-৪৫০ টাকা ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ঈদে কোনো ছাড় নেই। যাত্রীপ্রতি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৮০০ টাকা। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। তবে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা জানান, সারা বছর যাত্রীদের কাছ থেকে কম ভাড়া নিলেও ঈদে কোনো বাড়বে না, সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। সরকারি কর্তৃপক্ষ বলছে, ঈদে নির্ধারিত ভাড়া আদায়ে সময় কম নিলেও কাউকে শাস্তি দেওয়া যাবে না।

সোমবার রাজধানীর গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের সরকারি ছুটি শুরুর আগের কয়েক দিনের তুলনায় যাত্রী বেড়েছে।

মালিক-শ্রমিকরা জানান, তাদের আয়ের একটি বড় অংশ আসে ঈদ ভ্রমণ থেকে। তবে গত ঈদুল ফিতরের মতো এবারের ঈদেও যাত্রী কম। সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, যাত্রী সংকট চলছে। মালিকরা হতাশ।

গাবতলী বাস টার্মিনালের কাউন্টার কর্মীদের মন্তব্য- অর্থনৈতিক সংকটে মানুষের টাকা নেই। তাই যাত্রী কম। মালিক সমিতির এক নেতা জানান, গত কয়েক বছরে দ্রুত গতিতে বাড়ছে মোটরসাইকেলের সংখ্যা। ঈদে মোটরসাইকেলে ঢাকা ছেড়ে যায় ২০-২৫ লাখ যাত্রী। তাই বাসে যাত্রী সংখ্যা কমে গেছে। মহাসড়কে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে অনুরোধ করা হয়েছে। রোজা ও ঈদের ধারাবাহিকতায় এবারও কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি।

ঢাকা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে রজনীগন্ধা পরিবহনে ঈদুল ফিতরে গাবতলীতে দেখা হয় টিকিট মাস্টার নূর হোসেনের সঙ্গে। এটা নিয়ে আবার কথা হয়েছে। তিরি বলেন, আগের মতো গত ৩৭ বছরে ঈদে এত কম যাত্রী তিনি দেখেননি। সোমবার সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চারটি বাস ছাড়ে। কোনো বাসেই ৪০টি আসন পূরণ হয়নি। দুই বছর আগেও ঈদের আগে গাবতলীতে পা রাখা অসম্ভব ছিল। সিট না পাওয়া যাত্রীরা এসে ভিক্ষা করত, অন্তত দাঁড়াতে দেওয়া হোক। যাত্রীরা এখন ফোনও পাচ্ছেন না। মানুষের টাকা নেই। ভাড়া শুনে চলে যাচ্ছি। বাসে যেতে ৮০০ টাকা খরচ হয়। ৪০০ টাকার পেট্রোল নিয়ে মোটরসাইকেলে দুই যাত্রী চলে যায়।

সরকার নির্ধারিত ভাড়া নিয়ে প্রশ্ন

ঢাকা-মেহেরপুর রুটে সরকার নির্ধারিত ভাড়া ৯৩১ টাকা। এই রুটের শ্যামলী এনআর পরিবহন দুদিন আগেও যাত্রীপ্রতি ভাড়া নিত ৬০০ টাকা। এখন নেওয়া হচ্ছে ৯০০ টাকা। কিন্তু টিকিটে ৮০০ টাকা লেখা। শ্যামলী এনআর-এর কাউন্টারের সামনে টিকিট দেখাল। যুবক জানান, গত রোববার তিনি মেহেরপুরের গাংনী থেকে ৬০০ টাকায় এসেছেন।

ঢাকা-যশোর-বেনাপোল রুটে সরকার নির্ধারিত ভাড়া ৭৫৩ টাকা। হানিফ পরিবহনে নেওয়া হয় ৬৫০ টাকা। এখন যশোর গেলেও বেনাপোলে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৭৫০ টাকা। ঢাকা-খুলনা রুটে সরকার নির্ধারিত ভাড়া ৮১৭ টাকা। গত শনিবার পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে ৭০০ টাকা। এখন নিচ্ছে ৮০০ টাকা। ঢাকা-সাতক্ষীরা রুটে সরকার নির্ধারিত ভাড়া ৯৪৪ টাকা; ৬৫০ টাকা নেওয়া হয়েছে।

তবে যাত্রীরা প্রশ্ন তুলছেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়া কি বেশি?

গাবতলীতে ভিজিলেন্সের দায়িত্বে থাকা বিআরটিএ কর্মীরা জানান, যাত্রীরা অনেক অভিযোগ করেছেন। কিন্তু যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, তালিকার চেয়ে ভাড়া বেশি নেই। সংগঠনের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ভাড়ার তালিকা সমান হলে কিছু করার নেই। বাড়াবাড়ি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খন্দকার এনায়েত বলেন, অতিরিক্ত ভাড়ার কোনো অভিযোগ পাইনি। কেউ বেশি ভাড়া নিলে বিআরটিএর ব্যবস্থা করুন।

মহাসড়কে যানজট নেই

ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজটের কোনো খবর নেই। গতকাল গাবতলী এলাকা পরিদর্শন শেষে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ২৪ ঘণ্টা সড়কে থাকবেন। মোটরসাইকেল টহল দল অভিযোগ পাওয়ার জন্য এবং দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হাইওয়েতে থাকবে। আপনি যদি পিকআপ ট্রাকে যাত্রী পরিবহন করেন, পুলিশ আপনাকে হাইওয়েতে নামিয়ে দেবে। যাত্রীদের গণপরিবহন ব্যবহার করার পরামর্শ দেন আইজিপি।

কালিয়াকোর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, গতকাল দুপুর থেকে উত্তরবঙ্গগামী মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার পর চন্দ্রা মোড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়।

সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, সোমবার সকাল থেকে যমুনা নদীর বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাশে মহাসড়কের সিরাজগঞ্জগামী লেনে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। সেতুর পূর্ব দিকে এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার দূরত্বে যানবাহনের ধীরগতি দেখা যায়।

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, পাটুরিয়া ও আরিচা ফেরি ঘাটে সোমবার দুপুরের পর থেকে যানবাহনের চাপ কিছুটা বেড়েছে। তবে বিগত বছরের মতো গাড়ির দীর্ঘ সারি নেই। ফেরি যথাসময়ে পদ্মা পার হতে সক্ষম হয়। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যানবাহনের চাপ বেড়েছে।