ওভারহেড পাওয়ার লাইনে বিপত্তি
৪.৪ কেভি (কিলোভোল্ট) ক্ষমতার পাওয়ার সাপ্লাই লাইন। লাইনটি গাছ এবং বাঁশের খুঁটি জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ সরবরাহ লাইনের মধ্যে থেকে নেওয়া আবাসিক সংযোগ। নিয়মানুযায়ী বিদ্যুতের খুঁটির ১৩০ ফুটের মধ্যে গ্রাহকের মিটার বসানোর কথা থাকলেও লাইন চলে যায় মাইলের পর মাইল। এতে ভোল্টেজের লো-ভোল্টেজের সিস্টেম লস এবং ভোক্তা প্রান্তে পাওয়ার ডিভিশন দিন দিন বাড়ছে। ময়মনসিংহ অঞ্চলে এসব বিপজ্জনক লাইনে দুর্ঘটনাও ঘটছে প্রাণহানি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নিম্নমানের বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনে দিন দিন প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়ছে। ঈশ্বরগঞ্জ ও গৌরীপুর উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে পিডিবির ঈশ্বরগঞ্জ আবাসিক কার্যালয়। আবাসিক, বাণিজ্যিক এবং সেচ গ্রাহক সহ মোট গ্রাহক সংখ্যা ১৬,০০০। এর মধ্যে ১১ কেভি সরবরাহ লাইনের ৮০ কিলোমিটার এবং ৪ কেভি সংযোগের ১১০ কিলোমিটার। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, ৪ কেভি পাওয়ার সাপ্লাই লাইনের প্রায় ৩০ শতাংশই ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া ৩৫ শতাংশ সরবরাহ লাইন গ্রাহক পর্যায়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি থেকে ১৩০ ফুটের বেশি সংযোগের ব্যবস্থা নেই। কিন্তু বিভিন্ন এলাকায় খুঁটি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেও সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
গত শুক্রবার রাতে ঝড়ের সময় ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভিতরের খুঁটি থেকে ৫০০ মিটার দূরে একটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শনিবার দত্তপাড়া গ্রামের কামরুজ্জামান শাহিনের প্রায় দেড় লাখ টাকা মূল্যের একটি গরু ঘাস খেতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। কামরুজ্জামান শাহিন জানান, বিপজ্জনক লাইনে তার গরু মারা গেছে। ধরা না পড়লে আরও গরু ও মানুষ মারা যেতে পারত।
দত্তপাড়ায় বিএনপি নেতা নূরে আলম জিকুরের বাড়ির সামনের এলাকায় গাছ ও বাঁশের খুঁটি দিয়ে ৪ কেভি বিদ্যুতের লাইন বসানো হয়েছে। নূরে আলম জিকু বলেন, উচ্চ ক্ষমতার বিদ্যুৎ লাইন সড়ক থেকে নাগালের মধ্যে রয়েছে। যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
পিডিবির ঈশ্বরগঞ্জের বাসিন্দা প্রকৌশলী ইমতিয়াজ মামুন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী খুঁটির ১৩০ ফুটের মধ্যে মিটার বসানোর কথা থাকলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। বাঁশের খুঁটি দিয়ে ৪ কেভি লাইন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কত কিলোমিটার এলাকায় ঝুলন্ত ও বিপজ্জনক লাইন রয়েছে? জবাবে তিনি বলেন, এসব হিসাব নেওয়ার সময় আগের দুই কর্মকর্তাকে এখান থেকে বদলি করা হয়েছে। এখন তিনি মজুদ নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
হালুয়াঘাট উপজেলায় বিদ্যুৎ গ্রাহকের সংখ্যা ১৮ হাজার ৫০০। এ উপজেলায় ১১ কেভি লাইন ১৯০ কিলোমিটার এবং ৪ কেভি লাইন ১২০ কিলোমিটার। এর মধ্যে বিপজ্জনক লাইন প্রায় ১০০ কিলোমিটার। আবাসিক বিদ্যুৎ প্রকৌশলী নিরঞ্জন কুন্ডু বলেন, নিম্নমানের লাইনের কারণে সিস্টেম লস বাড়ছে। আগামীতে এলাকাটি প্রকল্পের আওতাভুক্ত হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
গৌরীপুর উপজেলায় গ্রাহক রয়েছে ১৯ হাজার ৮০০ জন। এখানে ১১ কেভি লাইন ১৫০ কিমি এবং ৪ কেভি লাইন ৮০ কিমি। মানহীন লাইন সংস্কারের কাজ চলছে। তবে এখনো ৫ শতাংশ লাইন নিম্নমানের বলে দাবি করেন আবাসিক প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল নোমান।
পিডিবির ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, বেশ কিছু জরাজীর্ণ লাইন রয়েছে। কিন্তু প্রকল্প হাতে নিয়ে সেগুলো সংস্কার করা হচ্ছে। এই সমস্যা এক বছরে থাকবে না।