জাপানীজ শিপ ওনার্স এসোসিয়েশনের ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল বিএসবিআরএ সদস্যেদের সাথে এক মত বিনিময়
বিদেশ থেকে কাটিং করার জন্য জাহাজ আনা হয়েছে কয়েক মাস আগে। এরমধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি পাওয়া গেলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের মেলেনি এখনও ছাড়পত্র। ফলে অধিকাংশ পরিত্যাক্ত জাহাজ পড়ে আছে চট্টগ্রামের সীতাকু-ে শিপ ব্রেকিং রিসাইক্লিং ইয়ার্ডে। এতে করে কোটি কোটি টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের মালিকদের।
জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের মালিকদের দাবী, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্তা ব্যক্তিদের কাছে গিয়েও জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পকে কেন হঠাৎ করে কমলা থেকে লাল শ্রেণীভূক্ত করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোন আশানুরূপ উত্তর মেলেনি। তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে গিয়েও কোন সুদত্তোর পাওয়া যায়নি। মূলত পরিবেশ অধিদপ্তরের ভেতরে কী রহস্য লুকিয়ে আছে, কেন তারা একটি অগ্রসরমান শিল্পকে বিশ্ব দরববারে হীন করতে উঠে পড়ে লেগেছে সে বিষয়ে সরকারের কর্তা ব্যক্তিরাও বুঝে উঠতে পারছেন না। আমরা চায় এর সুরাহ হোক।
পরিবেশ অধিদপ্তরের এমন রহস্যময় আচরণের মধ্যে গত শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের অভিজাত হোটেল রেডিসন ব্লু বে ভিউতে জাপানীজ শিপ ওনার্স এসোসিয়েশনের (জেএসএ) ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ শীপ ব্রেকার্স এন্ড রিসাইক্লার্স এসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) সদস্যেদের সাথে এক মত বিনিময় সভায় মিলিত হন। এছাড়া গতকাল শনিবার সকালে সীতাকু-ের ‘ট্রিটমেন্ট স্টোরেজ এন্ড ডিসপোজেল ফ্যাসিলিটি (টিএসডিএফ)’ সাইট ও দেশের প্রথম গ্রীন শিপ ইয়ার্ড পিএইচপি শিপ রিসাইক্লার্স ইয়ার্ড পরিদর্শন করেন জাপানীজ প্রতিনিধি দল।
মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাপানীজ শিপ ওনার্স এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কেইজি টমোডা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশ অগ্রসরমান। এ শিল্প হংকং কনভেশনে যে চুক্তি হয়েছিল সে অনুযায়ী ইয়ার্ড নিমার্ণ ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। এছাড়া অধিকাংশ ইয়ার্ডে এখন কায়িক পরিশ্রম কমিয়ে অটোমেশনের আওতায় আনা হয়েছে। আমরা সন্তুষ্ট।
বিএসবিআরএ এর ভাইস প্রেসিডেন্ট-৩ ও পিএইচপি শিপ ব্রেকিং রিসাইক্লিং ইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল ইসলাম রিংকু বলেন, কমলা থেকে লাল শ্রেণীভূক্ত করার কারণে আমাদের হয়রানি বেড়েছে। আগে শুধুমাত্র শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে জাহাজ কাটিং এর জন্য অনুমতি নিলে হতো। এখন পরিবেশ অধিদপ্তর থেকেও নিতে হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর এখন অনুমতি দিতে গড়িমসি করছে। ফলে আমাদের জাহাজগুলো কাটিং না করে পড়ে আছে। আমাদের কোটি কোটি লোকসান হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরকালে গত ২৩ এপ্রিল জাপান সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে শিপ রিসাইক্লিং সংক্রান্ত একটি সহযোগিতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়েছে। সেখানে আমাদের সরকার প্রধান এ শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য জাপান সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন। ফলে এ শিল্পকে কমলা থেকে লাল শ্রেণীভূক্ত করায় হংকং কনভেনশন রেটিফিকেশনার উদ্যোগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এই অবস্থার অবসান এবং পূর্বের নিয়মে সহজে শিপ রিসাইক্লিং করার জন্য আমরা দাবি জানাচ্ছি।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএসবিআরএ এর প্রসিডেন্ট মো. আবু তাহের। বিশেষ অতিথি ছিলেন জিএমএস’র কী নোট স্পিকার ড. অনিল এফ. শর্মা, এনওয়াইকে লাইনের জেনারেল ম্যানেজার ও জাপানীজ শিপ রিসাইক্লিং কমিটির সদস্য টাকুয়া কইজুমি, এনএস ইউনাইটেড কাইয়ুন কাইসা ও জাপানীজ রিসাইক্লিং কমিটির বিকল্প সদস্য হিরোকি তানাকা, ক্লাস এনকের ম্যানেজার টাকেশি নারোসি, এমএলআইটির পরিচালক ড. মাসানোরি যুসিদা, এনওয়াইকে লাইনের ম্যানেজার জিগামি নবয়ুকি, কেএর এর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার কুদু ইয়াসুশি, জেএসএ ডেপুটি ম্যানেজার ইয়ামাগামি হিরোয়ুকি, এনকে ক্লাস টিএলডি তানিগুচি রাইয়ুয়া, ইন কর্পোরেশন জেএনএস অতসুকি সুমিয়ুকি, এমওএল এর তাকাহাসি নবয়ুকি ও আকিয়ামা নাইয়ুকি। বক্তব্য রাখেন বিএসবিআরএ কার্যনিবার্হী কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সিনিয়র সদস্য শওকত আলী চৌধুরী, বিএসবিআরএ এর ভাইস প্রেসিডেন্ট-৩ ও পিএইচপি শিপ ব্রেকিং রিসাইক্লিং ইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল ইসলাম রিংকু।
একই সময়ে ভাটিয়ারী বানুর বাজার বিএসবিআরএ এর কার্যালয়ের সামনে জাহাজ পুন:প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পকে ‘লাল’ শ্রেণীভূক্ত থেকে ‘কমলা’ শ্রেণীতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মানববন্ধন করেছেন জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের শ্রমিকরা। শ্রমিকদের দাবী, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না দেওয়ার কারণে অনেকগুলো জাহাজ কাটিং কার্যক্রম শুরু করতে পারছেন না মালিকরা। এতে শ্রমিকরা কাজ হারাচ্ছেন। তাদের দিকে তাকিয়ে হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের এমন জঠিলতা দ্রুত সমধান করে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পকে গতিশীল করতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে ইয়ার্ড মালিকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হবেন, তেমনি কর্মহীন হয়ে পড়বেন শ্রমিকরা।