ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’।জনপ্রিয় কফির নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে কেন?
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ ১২ মে দুপুরের পর কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তবে আমেরিকার আবহাওয়া মডেল বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি ১৩ মে দুপুর ১২টার পর উত্তর চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও ভোলা জেলার উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে। এই ঘূর্ণিঝড় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশায় আসতে পারে। কেন এই ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় কফির নামে? অনেক মানুষ এটা সম্পর্কে কৌতূহল আছে.
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়। উদাহরণস্বরূপ, থাইল্যান্ড এর আগে সাইক্লোনের নামকরণ করেছিল সিট্রং। একইভাবে আরব সাগরের ধারে ইয়েমেনকে ‘মোখা’ নাম দেওয়া হয়েছে।
যদিও ‘মোখা’ শব্দের কোনো আভিধানিক অর্থ নেই। ঘূর্ণিঝড়টির নামকরণ করা হয়েছে ইয়েমেনের বন্দর নগরী মোখা (উচ্চারণ মোকা)। ১৯ শতক পর্যন্ত, মোখা ইয়েমেনের রাজধানী সানার প্রধান বন্দর ছিল। এই শহরে বিখ্যাত কফি ‘মোখা’ চাষ হয়। শহরের নামেই কফির নামকরণ করা হয়েছে। বহু বছর ধরে মখা বন্দর দিয়ে ‘মখা’ কফি ভারত ও বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।
মোস্তফা কামাল পলাশ, কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক, বিশ্বের বিভিন্ন আবহাওয়ার মডেল পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি বলেন, ইউরোপীয় মডেল অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়টি ১২ মে দুপুর ১২টার পর কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তবে আমেরিকা ওয়েদার মডেল বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও ভোলা জেলার উপকূলে আঘাত হানতে পারে। ১৩ মে দুপুর ১২টা।
ইউএস এবং ইইউ আবহাওয়ার পূর্বাভাস মডেলের মধ্যে ব্যবধান গত ২৪ ঘন্টা ধরে সংকুচিত হয়েছে। এই সময়ে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র ল্যান্ডফল প্রায় একদিন অগ্রসর হয়েছে। তবে দুটি মডেলের মধ্যে ল্যান্ডফল সময়ের পার্থক্য ১৮ ঘন্টা, যা এখন প্রতিদিন কমবে। দ্রুত বার্তা উপকূলে পৌঁছানো, আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি, দ্রুত ধান কাটাসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি নিতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে গতকাল বিকেলে আবহাওয়া অধিদফতরের জারি করা সতর্কতায় বলা হয়েছে, আগামী ৭ মে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ তৈরি হতে পারে, যা পরবর্তীতে আরও ঘনীভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে বলে আমরা সতর্কতা জারি করেছি। নিম্নচাপটি ৭ মে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি প্রথমে একটি নিম্নচাপ এবং পরে একটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে নাম হবে মখা।
মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, গত ২ মে বঙ্গোপসাগরে সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৩০ বছরের গড় তাপমাত্রার চেয়ে ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। সবচেয়ে খারাপ খবর হলো, সমগ্র বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রার বিচ্যুতি চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূল বরাবর সবচেয়ে বেশি। প্রায় ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সমুদ্রের পানির তাপমাত্রার বিচ্যুতি যত বেশি হবে ঘূর্ণিঝড় শক্তিশালী হওয়ার ঝুঁকি তত বেশি।