আছে অনুমোদন, নেই বিদেশে বিনিয়োগ
উদ্যোক্তাদের একটি অংশ দেশের বাইরে বিনিয়োগের অনুমতি পেতে বেশ আগ্রহী ছিল। গত বছর এ বিষয়ে নতুন নিয়ম প্রণয়নের আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু কোম্পানিকে বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি দেয়। তবে, ২০২০, ২০২১ এবং ২০২২ সালে অনুমোদিত ১২টি কোম্পানির মধ্যে ১১টি দেশের বাইরে বিনিয়োগ করেনি। মূলত, চলমান ডলার সংকট এবং মুদ্রার বড় অবমূল্যায়নের কারণে তারা ধীরগতির নীতি নিয়েছে। অন্যদিকে বিদেশি বিনিয়োগ সংক্রান্ত নতুন নীতিমালায় বিনিয়োগের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে দুটি কোম্পানি।
বাংলাদেশের পুঁজির হিসাব খোলা নেই। এ কারণে কেউ ইচ্ছামতো বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগ করতে পারে না। বিনিয়োগ করতে চাইলে নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুযায়ী আবেদন করতে হবে। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে সরকার নিযুক্ত কমিটি অনুমোদন দেয়। তবে বাংলাদেশ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদেশে বিনিয়োগ না করে অনেকেই দুর্নীতি বা কর ফাঁকির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করে। তাদের অনেকেই পাচারের টাকা দিয়ে অবৈধ বিনিয়োগও করেন। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ডলার সংকটের অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে বিভিন্নভাবে অর্থ পাচার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ২৩টি প্রতিষ্ঠান বিদেশে বিনিয়োগের বৈধ অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে ২১টি কোম্পানি দেশ থেকে ৭৭০ হাজার ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগের অনুমোদন পেয়েছে। এবং কারিগরি পরামর্শ এবং অন্যান্য পরিষেবার বিনিময়ে, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ার দুটি কোম্পানিতে বড় অংশীদারিত্ব অর্জন করেছে। এ পর্যন্ত ১০টি কোম্পানি দেশের বাইরে নিয়ে গেছে ৪ কোটি ১ লাখ ৪৮ হাজার ১৩৫ ডলার।
ইস্পাত খাতের অন্যতম কোম্পানি বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস (বিএসআরএম) কেনিয়া এবং হংকংয়ে প্রায় ৫.২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের অনুমোদন পেয়েছে। ২০১৬ সালে কেনিয়ায় প্রায় ৪,৬৭০ হাজার ডলার বিনিয়োগ অনুমোদনের বিপরীতে নেওয়া হয়েছে মাত্র ২৭ হাজার ২০০ ডলার। এবং হংকং ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিনিয়োগের জন্য অনুমোদন পেয়েছে কিন্তু এখনও কোনো টাকা নেয়নি। জানতে চাইলে বিএসআরএমের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত বলেন, কেনিয়ায় একটি কোম্পানি খুলে উৎপাদনে যাওয়ার কাজ চলছে। তারা সেখানে জমি খুঁজছেন। এবং তাদের ইতিমধ্যেই হংকংয়ে একটি ট্রেডিং ব্যবসা রয়েছে। বাকি ডলার দিয়ে শীঘ্রই একটি কোম্পানি গঠন করবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সব ধরনের কাঁচামাল বাইরে থেকে আনতে হয়। এখানে মূল্য সংযোজন শুধুমাত্র শ্রম। ফলে যেসব দেশে কাঁচামাল পাওয়া যায় সেসব দেশে কারখানা তৈরি করলে বেশি লাভজনক হওয়া সম্ভব। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশ অধিক লাভবান হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, গত বছরের শুরু থেকেই ডলারের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে এক বছরে ডলারপ্রতি দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ। এখন অনেকেই নিয়মিত ব্যবসা চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ অবস্থায় দেশের বাইরে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে। তিনি বলেন, গত বছর ব্যবসায়ীদের অনুরোধে এ নিয়ম করা হয়েছিল। এরপরই প্রকট হয়ে ওঠে ডলার সংকটের বিষয়টি। এ কারণে বিদেশি বিনিয়োগ যাচাই কমিটি আপাতত কোনো বৈঠক করছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু উৎপাদনের জন্য দেশের বাইরে বিনিয়োগ নেওয়া হয়, তেমনটা নয়। ওষুধসহ কিছু ক্ষেত্রে পণ্য বাজারজাতকরণের সুবিধার্থে বা সংশ্লিষ্ট দেশের আইনগত বাধ্যবাধকতার কারণে নামমাত্র বিনিয়োগে কোম্পানি খুলতে হয়। বাংলাদেশে উৎপাদিত হলেও সে দেশে খোলা কোম্পানির নামে পণ্য বাজারজাত করা যাবে। অবশ্যই, অনেক কোম্পানির শুধু তাদের পণ্য বাজারজাত করার জন্য বিদেশে শাখা বা লিয়াজোঁ অফিস রয়েছে। তৈরি পোশাক, ওষুধসহ বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিষ্ঠান পণ্যের বিপণনের সুবিধার্থে লোক নিয়োগ করে এবং বিদেশে এ ধরনের অফিস পরিচালনা করে। এর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা অন্য কোনো সংস্থার অনুমতি লাগে না।
এর আগে দেশের বাইরে বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ নিয়ে কোনো নিয়মনীতি ছিল না। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সিলেকশন কমিটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আবেদনের ভিত্তিতে কেস-বাই-কেস ভিত্তিতে অনুমতি দিত। ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে গত বছরের ১৬ জানুয়ারি এ বিধিমালা করা হয়। নতুন নিয়মের অধীনে, একজন শর্তসাপেক্ষ রপ্তানিকারক তার পাঁচ বছরের গড় বার্ষিক রপ্তানি আয়ের ২০ শতাংশ বা নিট সম্পদের ২৫ শতাংশ, যেটি কম হোক না কেন বিনিয়োগের জন্য আবেদন করতে পারবেন। রপ্তানিকারকের সংরক্ষিত (ধারণ) কোটা বা অ্যাকাউন্ট শুধুমাত্র সমজাতীয় খাতে বিনিয়োগের জন্য আবেদন করা যেতে পারে। দুটি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি নতুন নিয়মের জন্য আবেদন করলেও এখনো অনুমতি পায়নি।
যারা অনুমতি পেয়েও বিনিয়োগ করেননি
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বাইরে বিনিয়োগের অনুমতি পেয়েও বিনিয়োগ না করার তালিকায় রয়েছে ১১টি কোম্পানি। সর্বশেষ ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি, চারটি কোম্পানি পাঁচটি দেশে এক মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের অনুমতি পেয়েছে।