ঈদের ছুটি বাড়ে না, ভোগান্তিও কমে না
এই ঈদের ছুটিতে ঢাকা ছাড়বে ১২ লাখের বেশি মানুষ। প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ ঢাকার বাইরে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে যেতে পারে। এটি বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব। ছুটি এখন তিন দিন হওয়ায় ঈদের আগের দিন ও পরের দিন গ্রামগামী যাত্রী কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঈদ ভ্রমণের দুর্ভোগ অবর্ণনীয় হয়ে উঠতে পারে।
এ প্রেক্ষাপটে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন মহল থেকে ঈদের ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে সরকার এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ফলে ঈদ ভ্রমণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সবাই। যদি ছুটি তিন দিন হয়, তবে বেশিরভাগ কর্মীদের বাড়িতে যাতায়াতের জন্য কার্যত সময় ফুরিয়ে যাবে। অতিরিক্ত ছুটি না পেলে তাদের ঈদ আনন্দ ময়লা হয়ে যাবে। আর বাস্তবিক কারণে বেশির ভাগ শ্রমিক ঈদে বাড়তি ছুটি পান না। ফলে ঈদে অতিরিক্ত ছুটির দাবির বিষয়ে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না।
মন্ত্রিসভার দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, ঈদের ছুটি বাড়ানোর বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিবেচনাধীন রয়েছে। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
এ বছর ঈদের তিন দিনের ছুটির মধ্যে দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার। অনেক সরকারি কর্মচারী এটাকে বড় ‘ক্ষতি’ হিসেবে দেখছেন। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এই ঈদ হবে ২২ এপ্রিল শনিবার। ২১, ২২ এবং ২৩ এপ্রিল সরকার নির্ধারিত ছুটি ঘোষণা করেছে। সেই হিসাবে, কর্মচারীদের ২০ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কাজ করতে হবে। ঈদের আগে বাড়ি যাওয়ার আর মাত্র একদিন আছে, অর্থাৎ ২১ এপ্রিল শুক্রবার।
তবে ২০ এপ্রিল অফিস বন্ধ থাকলে মোট ছুটি হবে পাঁচ দিন। কারণ, আগের দিন ১৯ এপ্রিল ছুটির কথা রয়েছে। তবে ৩০ দিন রোজা থাকলে ঈদ হবে ২৩ এপ্রিল রবিবার। সেক্ষেত্রে ছুটি হবে চার দিন। কিন্তু এবার ৩০টি রোজা রাখার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
আগামী ঈদে ছুটি বাড়ানো হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ছুটি বাড়ানোর এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর। ঈদের ছুটি সংক্রান্ত পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হবে। কোনো সিদ্ধান্ত হলে আগেই জানানো হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার সব সময় চায় মানুষ যেন কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই সব ধরনের উৎসব পালন করতে পারে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে সরকারি অফিস-আদালত খোলা রাখা হয়েছে। তাই সরকারকে দুই দিকেই ভাবতে হবে।
প্রতি খ্রিস্টান বছরের শুরুর আগে মন্ত্রিসভায় বার্ষিক ছুটি মঞ্জুর করা হয়। এই বছরের সাধারণ ও নির্বাহী আদেশ, যা গত বছরের ৩১ অক্টোবর মন্ত্রিসভা দ্বারা পাস হয়েছিল, ২২ দিনের ছুটি রয়েছে, যার মধ্যে আটটি শুক্র ও শনিবার পড়ে।
ঈদের ছুটি অন্তত একদিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, ১৯ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লাখ মানুষ রাজধানী ছাড়তে পারবেন। তবে ২০ এপ্রিল অফিস খোলা থাকায় যাত্রীদের একটি বড় অংশ এ দিন পর্যন্ত যেতে পারবেন না। শুক্রবার চাপে পড়বে এসব যাত্রী। তবে ২০ এপ্রিল সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হলে যাত্রীর চাপ কমতে পারে। ২১ এপ্রিল ছুটি না থাকলে সারা দেশের সড়ক, রেল ও নৌপথ স্থবির হয়ে পড়তে পারে।
সরকারের নির্বাহী আদেশের ছুটি সংক্রান্ত আদেশ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি বিভাগ জারি করে। এই মহকুমার যুগ্ম সচিব সাইফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাহী আদেশে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত আসে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। এ বিষয়ে নির্দেশনা না থাকলে আমাদের কিছু করার নেই। নির্দেশনা পাওয়ার পরই আমরা সংশ্লিষ্ট কাজ শুরু করতে পারব।
দেশে ঈদের ছুটির পাশাপাশি নির্বাহী আদেশে একদিন ছুটি দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। ২০১৬ সালে এমন ছুটি দেওয়া হয়েছিল। ঈদুল ফিতরের জন্য মোট ৯ দিন ছুটি ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের মতে, ঈদের সময় দীর্ঘ হলে যানজটের কারণে সৃষ্ট জটিল পরিস্থিতি সামাল দেয়া তাদের জন্য সহজ হয়ে যায়।
আলোচনা হয়েছে, সমাধান হয়নি: প্রতিবার ঈদ এলেই নির্বাহী আদেশে ছুটির বিষয়টি আলোচনায় আসে। ব্যতিক্রম হিসেবে, কিছু ঈদ প্রত্যাশার চেয়ে বেশি, অর্থাৎ ৭-৮ দিনের ছুটি। তবে ঈদে তিন দিনের বেশি ছুটি না থাকায় সেবার ভোগান্তির শেষ নেই। এমন সমস্যা অপেক্ষা করছে এই ঈদে। সরকার চাইলে নির্বাহী আদেশে ছুটি বাড়াতে পারে। নির্বাহী আদেশে ছুটি বাড়ানোর আগে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করতে হবে। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকারও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে ছুটি ঘোষণা করে।