করদাতারা হাসিমুখে বাড়ি ফিরলেন। ঘরোয়া আপিল শুনানিতে অংশ নেন মেয়র চসিকের

0

সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী প্রস্তাবিত পৌর কর (হোল্ডিং ট্যাক্স ও রেট) সংক্রান্ত করদাতাদের অভিযোগ তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করেন। এতে করদাতারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। গতকাল অনুষ্ঠিত রাজস্ব সার্কেল-২ এর অধীনে গৃহ কর সংক্রান্ত আপিল শুনানিতে অংশ নিয়ে করদাতাদের অভিযোগ শোনেন মেয়র। একই সঙ্গে তিনি করদাতাদের দাবি অনুযায়ী ‘সহনীয়’ হোল্ডিং ট্যাক্স আরোপ করেছেন। এতে খুশি হয়ে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে আপিলকারীদের। এর আগে রাজস্ব বিভাগের কর্মীরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

জানা গেছে, রাজস্ব সার্কেল-২ এর অধীন চান্দগাঁও, পূর্ব ষোলশহর ও মোহরা ওয়ার্ডের ১৪৭টি আপিল বহদ্দারহাটের একটি কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত শুনানিতে নিষ্পত্তি করা হয়। সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শুনানি শুরু হয়।

শুনানিতে অংশ নেওয়া আপিলকারী শহিদ বলেন, আগে ২৭০০ টাকা বাড়ি কর দিতাম। মূল্যায়নে আদায় হয় ৩৬ হাজার টাকা। শুনানিতে আজ (গতকাল) তা হয় পাঁচ হাজার টাকা। এতে আমি খুশি।

আরেক করদাতা বলেন, আগে বছরে ৮৪২ টাকা কর দিতাম। তা বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়। আপিল করে তা কমিয়ে ২৫০০ টাকা করেন মেয়র। মেয়রকে অনেক ধন্যবাদ।

লায়লা বেগম নামের এক করদাতা জানান, চান্দগাঁওয়ের দর্জি পাড়ায় একটি একতলা ভবন রয়েছে। আমার বাসা ভাড়া ছিল ২ হাজার ৪০ টাকা। তা বাড়িয়ে সিটি করপোরেশন ২০ হাজার টাকা ধার্য করেছে। এখন আপিল করা হয়েছে ৩ হাজার ৭৪০ টাকা।

লালালা বেগম জানান, অসুস্থতার কারণে তার স্বামী মারা গেছেন। বাবার তৈরি বাড়িতে দুই সন্তান নিয়ে থাকেন। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। আরেক মেয়ে কলেজে আর ছেলে স্কুলে। তার নিজের কোনো আয় নেই। ভাইদের আর্থিক সহযোগিতায় সংসার চালান। তাই প্রস্তাবিত হাউস ট্যাক্স একটু কমিয়ে দিলে ভালো হবে।

চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ নুরুল আলম জানান, দোতলা ভবনের জন্য তিনি ৫ হাজার ১০০ টাকা বাড়ি কর দিতেন। এটি মূল্যায়নে কয়েকবার গুণিত হয়েছিল। আপিলের পর তা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার ২০০ টাকা গৃহ কর।

চান্দগাঁওয়ের ফরিদা পাড়ার বাসিন্দা সৌরভ বড়ুয়া জানান, তাদের তিনটি আধাপাকা ঘর রয়েছে। তিনি তাদের জন্য গৃহ কর হিসাবে ৮৪২ টাকা দিতেন। কিন্তু তা বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হয়। আপিলেও তা আড়াই হাজার টাকা পাওয়া গেছে। এখন এটা সহনীয়। সেলিম একজন আপিলকারী বলেন, আমি সন্তুষ্ট। এজন্য আমি মেয়রকে ধন্যবাদ জানাই। রফিক নামের আরেক করদাতা বলেন, এটা সহনীয় পর্যায়ে করা হচ্ছে। সবাই খুশি।

মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, করদাতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সহনীয় পর্যায়ে গৃহ কর নির্ধারণ করা হচ্ছে। মানুষ সন্তুষ্ট হয় এবং বিভ্রান্তিও দূর হয়। কর নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে, জনগণের মনে স্বস্তি আনতে, কর নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে ৪১টি ওয়ার্ডে এই শুনানির আয়োজন করব।

মেয়র আরও বলেন, সিটি করপোরেশন একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। নগরবাসীদের গৃহ কর থেকে রাজস্ব দিয়ে নাগরিক সেবা প্রদান করা হয়। যদিও প্রতি পাঁচ বছরে নতুন করে কর মূল্যায়নের বিধান রয়েছে, তবে পূর্ববর্তী বছর ২০১১-১২ এর জন্য কোন কর মূল্যায়ন করা হয়নি। ২০১৭ সালে হাউস ট্যাক্সের মূল্যায়ন স্থগিত রাখা হয়েছিল। এই বছর, স্থগিত ট্যাক্স মূল্যায়ন পুনরায় সক্রিয় করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা এসেছে। এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেখা যায় ২০১৭ সালের কর মূল্যায়নে যথেষ্ট অসঙ্গতি রয়েছে। এই অসঙ্গতি দূর করতে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক আপিল বোর্ড গঠন করা হয়। আপিলের লক্ষ্য গৃহস্থালি করের অসঙ্গতি দূর করা এবং করদাতাদের জন্য সহনীয় পর্যায়ে কর নির্ধারণ করা। বিষয়টি সহজতর করার জন্য, কাউন্সিলর এবং আপিল বোর্ডের সাথে করদাতাদের একটি গণশুনানির ব্যবস্থা করা হয়।

প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা। নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেমের সঞ্চালনায় শুনানিতে বক্তব্য রাখেন আপিল বোর্ডের প্রধান কাউন্সিলর আবুল হাসনাত। বেলাল, এম. আশরাফুল আলম, মোঃ কাজী নুরুল আমিন, মোঃ এশারারুল হক, রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরিজ, কর কর্মকর্তা ও কর আদায়কারী এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

জানা গেছে, সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে চসিক সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে মোট ১৭ শতাংশ পৌর কর আদায় করে। এর মধ্যে রয়েছে ৭ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স (হাউস ট্যাক্স), ৩ শতাংশ বিদ্যুতায়ন হার এবং ৭ শতাংশ নগর অপসারণের হার।

এদিকে, সিটি করপোরেশন ট্যাক্সেশন রুলস অ্যাক্ট, ১৯৮৬-এর ২১ ধারা অনুযায়ী, নগর এলাকায় প্রতি পাঁচ বছর পর পর সব ধরনের ভবনের মাপকাঠি ও সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করে সিটি কর নির্ধারণ করা হয়। ২০১৬ সালে এই আইনের আলোকে চসিক কর্তৃক পঞ্চবার্ষিক গৃহ ও ভূমি কর পুনর্নির্ধারণ (পুনঃমূল্যায়ন) করা হয়। এর মধ্যে, ২০ মার্চ, ২০১৬ তারিখে প্রথম ধাপে নগরীর ১১টি ওয়ার্ডে মূল্যায়ন শুরু হয় এবং ২০ জুন শেষ হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *