ভারত সফর থেকে বাদ।রেফাঁস মন্তব্যই কি কাল হলো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

0

চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সোমবার সকালে ভারতের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে শেষ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর সফর থেকে বাদ পড়েন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ কে আব্দুল মোমেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি ‘ ভারতে যাননি।

সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিভিন্ন বেফাসঁ বক্তব্য নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। আর সম্প্রতি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার বিষয়ে তার বক্তব্য গোটা দেশে বিতর্ককে চরমে নিয়ে গেছে। তাই তাকে সফর থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠরা এই বক্তব্য মানতে নারাজ। তারা বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসলেই অসুস্থ। সুস্থ থাকলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গ দিতেন। প্রধানমন্ত্রী সফরে যাবেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার সঙ্গে যাবেন না- এটা হতে পারে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অসুস্থতার ধরন এবং তার শরীর এখন কেমন আছে জানতে চাইলে তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা করছেন বলে জানান তারা।

ভারত সফরে না যাওয়ার বিষয়ে জানতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। এমনকি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অসুস্থতার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান। তিনি বলেন, তবে এটাও সত্য যে, সম্প্রতি যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে এই সফরকে বিতর্কমুক্ত রাখতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুপস্থিতিও ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর উপলক্ষে গত রোববার বিকেল ৪টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে অনেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন সরকারি কর্মচারী রয়েছেন। পুরো তালিকা আপনার সামনে।’

এ সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষণের অনুলিপিতে সফরসঙ্গী হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রীদের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের কর্মসূচি ও সফরসঙ্গীর চূড়ান্ত তালিকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুই নম্বরে এবং তার স্ত্রী সেলিনা মোমেন তিন নম্বরে রয়েছেন। সংবিধানের এই তালিকা অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে ১৫৭ জনের সঙ্গে থাকার কথা ছিল।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, যখনই সরকার প্রধানের রাষ্ট্রীয় সফর থাকে, নিয়ম অনুযায়ী দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সফরসঙ্গী করতে হবে- এটাই রীতি। অনেক দিন ধরেই এই অবস্থা। এটি প্রথম ব্যতিক্রম।

এ কে আব্দুল মোমেন বেশ কিছুদিন ধরেই নানা মন্তব্য করে সমালোচিত। র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন গণমাধ্যমকে বলেন, র‌্যাবের ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে ভারতের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশ রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে ভারতের পরামর্শ চেয়েছে। এ ছাড়া শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে ভারতকে যা যা করা দরকার তাই করার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর উপলক্ষে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে আগামী সফরে ভারত সহযোগিতা চাইবে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। ভারতের সহযোগিতা চাওয়ার বিষয়ে তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার কাজের অন্যতম অগ্রাধিকার হচ্ছে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা। এটি অর্জনের জন্য যা যা করা দরকার আমরা তা করব। এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য যা যা করা দরকার তা করার জন্য আমি বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে ভারতকে অনুরোধ করেছি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভারতীয় গণমাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ধরে রাখা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে তুমুল সমালোচনা হচ্ছে। তাদের মিডিয়া বাংলাদেশের মতো নয়, তারা যখন কোনো বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা শুরু করে, তখন সম্পূর্ণ উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত তারা সম্পূরক প্রশ্ন করতে থাকে। এতে করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেমন বিব্রত হতেন, তেমনই প্রধানমন্ত্রী ভিভিআইপি সফরে বিব্রত হতেন। ফলে সফর থেকে বাদ পড়েছেন বলে জানান তিনি।

সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে না রাখার বিষয়টি বেশ কিছুদিন ধরেই সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা হয়। বিতর্কিত মন্তব্যে সরকার বিশেষভাবে অস্বস্তিতে ছিল। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সফরসঙ্গী হবেন কিনা সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন একমাত্র প্রধানমন্ত্রী। একইভাবে, নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভা রদবদলের আলোচনা সরকারের আলোচ্যসূচির শীর্ষে রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *