সাংস্কৃতিক যাত্রা।প্রমত্ত পদ্ম শুনলেন নব আলোড়নের গান

0

আছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ, বিদ্রোহী কবি নজরুল। আছেন ফকির লালন শাহ, সূর্য সেন, বেগম রোকেয়া। বাদ যাননি জাতীয় নেতা এএইচএম কামারুজ্জামান, নাট্যজন সেলিম আল দীন। নৌকায় ছবি তোলার এই ভিন্নধর্মী উৎসবে আরও অনেকে ছিলেন। সতরঙ্গ পতাকায় সজ্জিত ১৫টি নৌকা। একদিকে জাতীয় পতাকা, এই নৌকার যাত্রীরা বীর মুক্তিযোদ্ধা। এভাবেই গতকাল শনিবার রাজশাহীর পদ্মার পানিতে আনন্দ মুখরতায় বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের চার দশক উদযাপন হয়েছে।

হৃদয়ে এই জ্বলজ্বল স্লোগান নিয়ে, যখন অঝোর ধারায় বৃষ্টিতে আলুপট্টির পদ্মপদে কাগজের স্ট্রিং ভেসে উঠছিল, ঘড়িতে তখন ঠিক সকাল সাড়ে দশটা। লোকনাট্যের যাত্রার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু।

হাজার বছরের বাংলা নাটকের দিকে ফিরে তাকানোর এই সাংস্কৃতিক যাত্রাই প্রথম। রাজশাহী থিয়েটার ও পদ্মা-বড়াল থিয়েটার প্রতিটি গ্রামে সাংস্কৃতিক জগতে আলোড়ন তুলতে এই ভিন্ন আয়োজনের আয়োজন করছে।

উদ্বোধনের পর পদ্মার বুকে ছুটে আসে নৌকার বহর। ক্রুজে অতিথি ছাড়াও ছিলেন গণমাধ্যমকর্মী, বিভিন্ন লোকনাট্য দলের সদস্যরা। শিল্পীরা নৌকায় আলকাপ, গম্ভীরা ও দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করে। মাইকে এসব পরিবেশনা ও গানের মধুর আওয়াজ ভেসে ওঠে গ্রামে গ্রামে।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নৌকাটি চারঘাটের বড়াল নদীর তীরে ইলা মিত্র মঞ্চে এসে পৌঁছায়। মিছিল আছে। হঠাৎ করেই বারিধারায় উৎসবের ছন্দ। একপর্যায়ে অনুষ্ঠানস্থল ইলা মিত্র মঞ্চ সংলগ্ন উপজেলা মিলনায়তনে স্থানান্তর করা হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন গ্রাম থিয়েটারের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান, সাধারণ সম্পাদক তৌফিক হাসান ময়না, চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম, পৌর মেয়র একরামুল হক প্রমুখ।

এরপর পদ্মা-বড়াল থিয়েটারের শিল্পীরা মায়ের গান অবলম্বনে ‘বহুরূপে আসিব ফেরে’ পরিবেশন করেন। রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী গম্ভীরা পরিবেশন করে রাজশাহী মাঠোল। আলকাপ তানোরের আলকাপ রঙ্গোর গ্রাম থিয়েটার দ্বারা পরিবেশিত হয়। মনসামঙ্গল পরিবেশন করেন পদ্মা-বড়াল নাট্যশিল্পীরা।

নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘আমরা উদযাপন করছি এই নদীমাতৃক বাংলাদেশ, এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এই প্রকৃতি, এই মানুষগুলোকে নিয়ে আমরা আমাদের ঐতিহ্যবাহী শিল্প, নাটক, সঙ্গীত পরিবেশন করছি বিভিন্ন নৌকায়। আমরা দেশ, মানুষ, জীবন এবং অপূর্ব প্রকৃতি উপভোগ করছি।’

বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামারুল্লাহ সরকার বলেন, আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির হাজার বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। এটি রঙিন। নানা রঙে রঙিন। তাই বিভিন্ন রঙের পতাকা উড়িয়ে ১৫টি নৌকায় রঙিন হয়েছে আমাদের যাত্রা। আমাদের নাট্যচর্চার শিকড় খুবই মজবুত। আমরা যে নাটক চর্চা করি তার বেশিরভাগই ইউরোপীয় ধাঁচের। আমরা আমাদের নিজস্ব শৈলী মনোযোগ আনার জন্য এই আয়োজন. আশা করি এই উৎসবের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের নিজস্ব স্টাইলে ফিরতে পারব।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র পরিষদের সভাপতি ড. সাজ্জাদ বকুল বলেন, ‘নদী নিয়ে এই আয়োজনকে আমি অভিনব মনে করি।’

এই উৎসবে অংশ নেওয়া সিনিয়র সাংবাদিক আনোয়ার আলী হিমু বলেন, ‘প্রতিটি নৌকায় বিভিন্ন স্টাইলের শিল্পীরা ছিলেন। নাচ-গানসহ নানা আয়োজন করা হয়েছে।

কলেজ শিক্ষক আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদ বলেন, ‘এমন উৎসব রাজশাহীতে আগে কখনো হয়নি। এই উৎসব অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও সংস্কৃতির জাগরণের মাইলফলক হয়ে থাকবে।

স্কুলছাত্রী নিকিতা বলেন, ‘নদীর তীরে এমন উৎসব জীবনে প্রথম দেখলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *