দিল্লিতে আমন্ত্রণ পাননি মমতা।আশ্বাসের মধ্যে রয়েছে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি
এক শতাব্দী পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানিসম্পদ নিয়ে মন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বৈঠকের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে একটি চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। তবে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তার সবুজ সংকেত ছাড়া এই নদীর পানি বণ্টন নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ কোনো সমাধানে আসতে পারবে না। তাই তিস্তা চুক্তি বড় অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকাকে আপাতত আশ্বাসের মধ্যেই থাকতে হবে।
দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ জেআরসি-র পানিসম্পদ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক করার জন্য ভারতকে আহ্বান জানিয়ে আসছে। কিন্তু ভারত তার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তিস্তা নিয়ে কোনো সমাধান করতে পারেনি। ফলে এই বৈঠকও দীর্ঘদিন স্থগিত ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে বাংলাদেশ জেআরসি বৈঠকের অনুরোধ করলে এবার ভারত বৈঠকে বসতে রাজি হয়। একই সময়ে, দ্বিপাক্ষিক জেআরসি বৈঠকের আগে আগস্টের শুরুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আলোচনা করেন। বৈঠকে আলোচিত সব বিষয় গণমাধ্যমে না আসলেও প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই দেশ তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি জানিয়ে দিল্লির এক কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মমতাকে দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে ইতিমধ্যেই ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের কোনও সূচি নেই। ফলে এ সফরে তিস্তা চুক্তি না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
২৫ আগস্ট নয়াদিল্লিতে দুই দেশের মধ্যে ৩৮তম পানি সম্পদ মন্ত্রী পর্যায়ের জেআরসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে বাংলাদেশ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে স্বাক্ষর করার অনুরোধ জানায়। এই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো হয়েছে, চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ভারতীয় পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালানো হবে। বৈঠকে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ভারতীয় আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প নিয়েও আলোচনা হয়। বৈঠকে ভারতও বলেছে, বাংলাদেশকে না জানিয়ে একই নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করবে না। এর আগে ২০১০ সালে দুই দেশের মধ্যে জেআরসি বৈঠক হয়েছিল।
দিল্লিতে ৩৮তম জেআরসি বৈঠকে গঙ্গা, তিস্তা, মুন, মুহুরি, খোয়াই, গোমতী, ধরলা, দুধকুমার এবং কুশিয়ারা নদী সম্পর্কিত সমস্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া বন্যার তথ্য আদান-প্রদান, নদী তীর রক্ষণাবেক্ষণ, অভিন্ন অববাহিকা ব্যবস্থাপনা এবং ভারতীয় আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। একটি অন্তর্বর্তীকালীন পানি বণ্টন চুক্তির খসড়া তৈরির জন্য আরও ৪টি অভিন্ন নদীর তথ্য বিনিময় করতে জেআরসি বৈঠকে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। প্রধানমন্ত্রীর সফরে কুশিয়ারা ও ফেনী নদী নিয়ে দুই দেশের মধ্যে পৃথক চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৯৯৬ সালের গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির আলোকে উভয় পক্ষই সম্ভাব্যতা পুনঃ যাচাই করতে জেআরসি বৈঠকে সম্মত হয়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সোমবার ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি শেষবার ২০১৯ সালে ভারত সফর করেছিলেন।