সংকটে পোশাক রপ্তানি।লোডশেডিং সহ জ্বালানির দাম বৃদ্ধি

0

রাজধানীর মিরপুরের কালশীর অ্যাডাম অ্যাপারেলস ইতালি ও ফ্রান্সের দুটি ব্র্যান্ডের পোশাক সরবরাহ করে। এত দিন কারখানায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে জেনারেটরের প্রয়োজন ছিল না। তবে নিয়ম অনুযায়ী জরুরি ব্যবহারের জন্য জেনারেটর রাখা হয়। গত মাসে লোডশেডিং শুরু হওয়ার পর এখন চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা চলছে জেনারেটর। প্রতিদিন গড়ে ২০০ লিটার ডিজেল পোড়ানো হয়।

আগে তাদের জেনারেটর চালাতে দৈনিক খরচ হতো ১৬ হাজার টাকা। জ্বালানির দাম বাড়ানোর পর খরচ বেড়েছে ২৫ হাজার টাকা। কারখানার বাড়তি খরচ এখন প্রতি মাসে সাড়ে সাত লাখ টাকা। বড় কারখানার ক্ষেত্রে এই খরচ বেশি।

উৎপাদন পর্যায়ে এসব খরচ ছাড়াও কাঁচামাল আমদানি ও বন্দরে পণ্য আনার জন্য অতিরিক্ত পরিবহন খরচের চাপ রয়েছে। অনেক কারখানার শ্রমিক তাদের নিজস্ব বাসে পরিবহন করে। এর জন্যও বাড়তি টাকা গুনতে হবে। অর্থাৎ উৎপাদন ও রপ্তানির প্রতিটি পর্যায়ে এখন অতিরিক্ত খরচ যোগ হচ্ছে।

উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অস্বাভাবিক হারে জ্বালানির দাম বাড়ায় পোশাকের উৎপাদন খরচ অন্তত ২০ শতাংশ বেড়েছে। তবে বাড়তি খরচ সামলানোর উপায় খুঁজে পাচ্ছে না কারখানাগুলো। কারণ, এখন উৎপাদন পর্যায়ে থাকা এ ধরনের পোশাকের দাম অন্তত দুই মাস আগে নির্ধারণ করা হয়। মূল্য নির্ধারণ এবং চুক্তি বিদ্যমান পরিস্থিতি অনুযায়ী করা হয়. এখন উৎপাদন ও সরবরাহের ক্ষেত্রে নতুন করে হার বৃদ্ধির প্রস্তাব করার সুযোগ নেই। ফলে লোকসানে পোশাক উৎপাদন ও সরবরাহ করতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের।

তার ওপারে আছে ঝাক্কি। ব্র্যান্ড এবং ক্রেতারা নতুন চুক্তির ক্ষেত্রেও বর্তমান হারের বেশি দিতে রাজি নয়। কারণ বিশ্ববাজারে পোশাকের চাহিদা এখন কম। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার ২৭টি দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অফিসিয়াল ডেটা প্রদানকারী ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই শেষে জোটের মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এটি গত ২৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

আবার বাংলাদেশি পোশাকের একক প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরো অনুসারে, মার্কিন মুদ্রাস্ফীতি এখন ৯.১ শতাংশ। এটি গত ৪১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। রেকর্ড মূল্যস্ফীতির কারণে এসব দেশে পোশাকের চাহিদা কমছে।

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়া এবং বিশ্ববাজারে চাহিদা কমে যাওয়া ইত্যাদি কারণে পণ্য রপ্তানি কমছে। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৩.৯৮ বিলিয়ন ডলার। জুন মাসে এটি ছিল ৪.৯১ বিলিয়ন। অর্থাৎ এক মাসে রপ্তানি কমেছে ৯৩ মিলিয়ন ডলার। আরও উদ্বেগের বিষয়, আগামী মাসেও রপ্তানি কমবে প্রায় নিশ্চিত। উদ্যোক্তাদের এখন কম রপ্তানি আদেশ আছে।

রপ্তানি আদেশের গতিবিধি ইউটিলাইজেশন ডিক্লেয়ারেশন (ইউডি) তথ্যে ধরা পড়ে। রপ্তানি আদেশ পাওয়ার পর শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানির জন্য ইউডি সার্টিফিকেট প্রয়োজন। সরকারের পক্ষ থেকে বিজিএমইএ এই সনদ প্রদান করে। বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে কম ইউডি নিয়েছেন উদ্যোক্তারা। গত এক সপ্তাহ অর্থাৎ ১লা থেকে ৭ই আগস্ট পর্যন্ত ইউডির সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ১১৪টি। আগের মাসের একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ১৩২টি। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, ইউরোপ-আমেরিকার মুদ্রাস্ফীতি পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। তাদের সাধারণ কাপড় বা দামি কাপড় কেনার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। বৈশ্বিক বাজার ও রপ্তানি আদেশের এই বাস্তবতায় জ্বালানি খরচ ও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে রপ্তানি আদেশ আরও কমে গেছে। শোরুমে অবিক্রীত পণ্যের স্তুপ থাকায় বেশি দর দেওয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পোশাক খাতে উৎপাদন খরচ কত বেড়েছে তা হিসাব করছে বিজিএমইএ।

উৎপাদন এক-তৃতীয়াংশ কমে: দিনে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা লোডশেডিং এবং অস্বাভাবিকভাবে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। আবার মোট উৎপাদনও কমেছে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ। আসলে, কিছু দিন আগে, অ্যাডাম অ্যাপারেলসের রপ্তানি আদেশের বিষয়ে ইতালীয় ক্রেতার সাথে আলোচনা কোনও সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছিল।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল হক মুকুল বলেন, আগের হার থেকে এক শতাংশও বাড়াতে রাজি নন তারা। হতাশ হয়ে তিনি বলেন, আগামী মাসে শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ নিয়ে তিনি চিন্তিত।

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিকেএমইএর সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, কম রপ্তানি আদেশ, লোডশেডিং ও গ্যাস সংকটের কারণে তার কারখানায় উৎপাদন এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। তিনি বলেন, ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যানের কারণে বিদ্যুতের চেয়ে গ্যাসের অভাব বড় সমস্যা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *