বিশেষজ্ঞ মতামত।দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির উদাহরণ দরকার

0

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও সদস্য পদে বেপরোয়া ঘুষ ও হয়রানির হাত থেকে বাঁচাতে পুরো এমপিও ব্যবস্থা সংশোধনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, এমপিওভুক্তিতে ঘুষ নেওয়া শাস্তি হয় না। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হলে এই প্রবণতা ঠেকানো যাবে না।

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, এমপিও খাতে ঘুষ বন্ধে সরকারের দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রয়োজন। তা না হলে এই অন্যায় দূর করা যাবে না। কারণ এর শিকড় অনেক গভীর। তিনি বলেন, এমপিও খাতে অনিয়ম নিয়মে পরিণত হয়েছে।

কারণ, এভাবে কখনো দেখা যায়নি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একটি উপায় হতে পারে জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসরণ করে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক স্তর বাস্তবায়ন করা। আর দশম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ করা। এ দুটি কাজ করা হলে এমপিও খাতে ঘুষের লাগাম কিছুটা হলেও টেনে ধরা যাবে।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, কেউ ঘুষ দিতে অস্থির, কেউ ঘুষ নিতে নারাজ। শিক্ষকতা একটি পবিত্র পেশা। এ পেশার পবিত্রতা রক্ষায় এ চক্র ভাঙতে হবে। একজন শিক্ষককে কেন ঘুষ দিয়ে চাকরি বা এমপিও নিতে হবে? যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি/এমপিও পাওয়া সবার অধিকার। সবার অধিকার আদায় করতে হবে। এবং একটি রাষ্ট্র এটি চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে না।

তিনি বলেন, এখন অনেক শিক্ষিত ছেলে বিসিএস পাস না করে গ্রামে গিয়ে কৃষিকাজ করছে বা সরকারি চাকরি করছে; গরুর খামার দিচ্ছে। ঘুষ না দিয়ে উদ্যমী হতে হবে। আর একজন শিক্ষক যদি ঘুষ দিয়ে চাকরি নেন, তাহলে তিনি বারবার ভাববেন- এই টাকা কীভাবে জোগাড় করা যায়। সে অপকর্মে লিপ্ত হবে, প্রাইভেট টিউটরিংয়ের দিকে ঝুঁকবে।

অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘শিক্ষক হিসেবে আমি লজ্জিত। আমি যদি এমন অবস্থায় থাকতাম, আমি কখনই ঘুষ দিয়ে চাকরি নিতাম না।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘মাধ্যমিক শিক্ষা খাত উন্নয়ন প্রকল্প’-এর এমপিও বিশেষজ্ঞ ড. সাধন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, এমপিওভুক্তিতে অনিয়ম ও ঘুষ এড়াতে প্রধানত চারটি কাজ করতে হবে- ১. দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া; ২. মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের এমপিওগুলিতে মনিটরিং এবং নজরদারি বৃদ্ধি করা (এমওইউ); ৩. মোবাইল কোর্টের মডেলে মহাপরিচালক মাউশির নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী ঝটিকা অপারেশন কমিটি গঠন এবং ৪. শিক্ষক ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষিত না হওয়ায় শিক্ষকরা নিজেদের এমপিওর জন্য আবেদনও করতে পারেন না। তারা কাগজপত্র বোঝে না। তারা কাছাকাছি কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে অনলাইনে আবেদন করে।

একসময় মাউশির উপ-পরিচালক ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ডাঃ সাধন চন্দ্র বিশ্বাস বলেছিলেন, এমপিওর বিনিময়ে ঘুষ নেওয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেশে নেই। শাস্তি নিশ্চিত না হলে এ প্রবণতা বন্ধ করা যাবে না।

প্রবীণ শিক্ষক নেতা ও জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, এমপিও সদস্য পদে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়ম একটি বিরাজমান বাস্তবতা। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। যে জায়গার জন্য এমপিও চালু করা হয়েছিল সেখানে ধারণা বদলে গেছে। কারণ, ভালো বেতন-ভাতা না দিলে মেধাবী শিক্ষকরা যেমন শিক্ষকতায় আসবেন না, তেমনি এমপিওভুক্তির জন্য এত হয়রানি ও ঘুষের শিকার হয়ে কোনো মেধাবী এই পেশায় আসতে চাইবেন না; থাকতেও চায় না। ফলে শিক্ষার ক্ষতি হচ্ছে। মানসম্পন্ন শিক্ষার আশা করতে হলে শিক্ষকদের সব ধরনের হয়রানি থেকে মুক্ত থাকতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *