সরকারি গাড়িতে আগের মতোই পুড়ছে তেল
বহুমুখী সংকটে গোটা বিশ্ব। এই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছি। এই বৈশ্বিক সংকট রোধে সরকারের পক্ষ থেকে একগুচ্ছ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে; কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে সরকার জ্বালানি সাশ্রয়ের দিকে বেশি নজর দিচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জ্বালানি খরচ ২০ শতাংশ কমানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে শিথিলতা রয়েছে। জ্বালানির পরিমাণের বিজ্ঞপ্তি এখনও জারি করা হয়নি। ফলে সরকারের কঠোরতা প্রচেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জ্বালানি সুবিধা এখনো কমানো হয়নি। সুদবিহীন ঋণে গাড়ি নিয়েও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারা প্রকল্প ও অধিদফতরের গাড়ি ব্যবহার করছেন। এসব গাড়ির জ্বালানি খরচের বেশির ভাগই হয় মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বাজেট থেকে। মন্ত্রী, সচিব এবং মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জ্বালানি খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে তবে এখনও সংশোধন করা হয়নি। ফলে জ্বালানি খরচ নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন কর্মকর্তারা। তবে যানবাহন অধিদপ্তরের কর্মচারীদের ব্যবহৃত গাড়ির সংখ্যা কমানোসহ জ্বালানি সাশ্রয়ের কিছু সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
জানা গেছে, তিন হাজার উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব ও সিনিয়র সচিবদের গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ, চালক ও জ্বালানি বাবদ বছরে ১৮০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। তা সত্ত্বেও এ খাতে জ্বালানির লাগাম টেনে ধরা হয়নি। যানবাহন অধিদপ্তরে যেসব গাড়ি পাওয়া গেছে সেগুলো চিহ্নিত করেনি মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। এ সুযোগে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর অবৈধভাবে বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরের যানবাহন ব্যবহার করে চলছে চলমান প্রকল্পের কাজ। প্রায় প্রতিটি মন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) এবং সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) সরকারি গাড়ি চালান। অবৈধভাবে ব্যবহৃত এসব গাড়ির জ্বালানি খরচ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বাজেট থেকে। এ জন্য জ্বালানি খাতে অতিরিক্ত কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে ৪৭ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর জন্য গাড়ির জ্বালানি বাবদ ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য মন্ত্রীদের গাড়ি নিয়ে ঘোরাঘুরি না করার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ মন্ত্রীরা কতটা মানছেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
চার মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে ৭ কোটি টাকার জ্বালানি বরাদ্দ : যানবাহন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সরকারি গাড়ি রয়েছে ১ হাজার ৭৫০টি। এর মধ্যে ৮টি বিভাগীয় কমিশনার, ৬৪টি জেলা প্রশাসক এবং ৪৯২টি ইউএনও অফিসে দেড় হাজার গাড়ি রয়েছে। বাকি ২৫০টি গাড়ি ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চলছে। এতে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর অন্তত ৫টি গাড়ি পাচ্ছে। যানবাহন অধিদপ্তরের যানবাহন সরবরাহ কম হলেও মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে জ্বালানি খাতে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ খাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, কৃষি মন্ত্রণালয়ে ৬৫ লাখ টাকা এবং ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগে টাকা। এতে ৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা। ফলে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী জ্বালানি খরচ ২০ শতাংশ কমলেও যানবাহন বিভাগের গাড়ির চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি খরচের পরও টাকা থাকবে। আর এই অবশিষ্ট টাকা অবৈধ যানবাহনে ব্যবহার করা যাবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘জ্বালানি খাতের বরাদ্দের টাকায় কত গাড়ি চলছে এবং যানবাহন অধিদপ্তরের কত গাড়ি এই মুহূর্তে এলজিআরডি বিভাগে আছে তা আমার জানা নেই। কাগজপত্র দেখতে হবে।’