গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট।সরকার রেশনিংয়ে সমাধান খুঁজছে
দেশে এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট চলছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে দেশের গ্যাসক্ষেত্রে উৎপাদন কমেছে। এসব কারণে শিগগিরই গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে না। এতে বিদ্যুতের উৎপাদন কমে যাবে। বিদ্যুতের লোডশেডিং কমবে না। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে অর্থনৈতিক এবং গ্যাসের ব্যবহার এবং রেশনিং বিষয়ে কিছু নতুন নির্দেশিকা আসবে বলে আশা করা হচ্ছে, সূত্র জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বুধবার বিদ্যুৎ খরচ কমানোর কথা বলেছেন।
সূত্র জানায়, সরকার অফিস, আদালত ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে এসির ব্যবহার কমাতে চায়। সরকারি অফিসে এসি ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে বলা হবে। অনুষ্ঠান এবং ভবনগুলিতে অবাঞ্ছিত আলো বন্ধ করা উচিত। এ ছাড়া দিবালোকের সর্বোচ্চ ব্যবহারের ওপর জোর দিতে অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কলকারখানার সময়সূচিতে পরিবর্তন আসতে পারে। পরিবহন ও যেসব খাতে গ্যাসের অপচয় হয় সেখানে সরবরাহ কমিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আরও গ্যাস সরবরাহ করা হবে। সূত্র জানায়, সরকার ও কিছু শিল্পের (ক্যাপটিভ পাওয়ার ও বয়লার) গ্যাস ব্যবহারের দক্ষতা অনেক কম। সরবরাহকৃত গ্যাসের একটি বড় অংশ নষ্ট হয় এসবে। এসব খাতে সরবরাহ কমিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেশি গ্যাস দেওয়ার কথা রয়েছে। অর্থাৎ রেশনিংয়ের মাধ্যমে বর্তমান পরিস্থিতি সাশ্রয় ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চাহিদা নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দেওয়া হবে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গ্যাস চুরি রোধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হবে।
ফার্নেস অয়েলের শুল্ক কমানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। এতে ফার্নেস অয়েল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কমবে। ফলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বেশি হারে চালানো যাবে বলে মনে করছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বিদ্যুতের ব্যবহার সাশ্রয়ী হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য অফিস আদালত ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এসির ব্যবহার সীমিত রাখতে হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। বৈঠকে বিদ্যুৎমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি কোম্পানির প্রধানরা অংশ নেবেন।
পিডিবির দাবি লোডশেডিং কমেছে: সপ্তাহব্যাপী চলমান গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের কোনো উন্নতি হয়নি। বরং কোথাও কোথাও পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। লোডশেডিং বেড়েছে। তবে পিডিবির দাবি, লোডশেডিং কমেছে। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, সোমবার সারাদেশে এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। মঙ্গলবার তা নেমে আসে ৪৫০ মেগাওয়াটে। বুধবার পিডিবি জানায়, সারাদেশে মাত্র ১২২ মেগাওয়াটের ঘাটতি রয়েছে। তবে গতকাল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও লোডশেডিংয়ের তথ্য পাওয়া গেছে। খুলনা ব্যুরো জানায়, দক্ষিণের ২১টি জেলায় কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড লোডশেডিং চলছে। দিনরাত লোডশেডিং থাকে। গরমে মানুষ যেমন অস্থির হয়ে পড়ছে, তেমনি ব্যাহত হচ্ছে কারখানার উৎপাদনও।