আজ থেকে শুরু হচ্ছে হজের আনুষ্ঠানিকতা।দুই বছর পর লাখ লাখ মুসলমানের মহাসমাবেশ

0

ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হজ বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের মিনায় শুরু হচ্ছে। আজ সারা বিশ্বের ১০ লাখ মুসলমান মক্কার মসজিদুল হারাম (কাবা শরীফ) থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে মিনায় অবস্থান করবেন। এখানে তাঁবুতে তারা নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত করবে।

আগামীকাল সৌদি আরবের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৮ জিলহজ শুক্রবার পবিত্র হজ। পাঁচদিনব্যাপী হজের এটাই প্রধান আনুষ্ঠানিকতা। এদিন ফজরের নামাজ আদায় করে মিনা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে আরাফাত চত্বরে সমবেত হবেন হাজিরা। তারপর প্রায় আট কিলোমিটার দূরে মুজদালিফায় গিয়ে রাত কাটান এবং পাথর সংগ্রহ করুন।

ইসলামী আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক আর্থিক ও শারীরিকভাবে সক্ষম মুসলিম নর-নারীর জন্য জীবনে অন্তত একবার হজ করা ফরজ। বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার জন্য সৌদি সরকারের কঠোর বিধিনিষেধের কারণে, ২০২০ এবং ২০২১ সালে সীমিত সংখ্যক পুরুষ ও নারী ছাড়া কোনো দেশে মুসলমানদের হজ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে করোনার  কারণে শর্তসাপেক্ষ বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে।

এ কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে বসবাসকারী মুসলমানরা দুই বছর পর এবার হজ করতে পারছেন। সৌদি কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে একটি হলো হজযাত্রীদের কমপক্ষে দুটি করোনা ভ্যাকসিন নিতে হবে এবং তাদের বয়স ৬৫ বছরের কম হতে হবে। এবার সৌদি আরবের বাইরে থেকে সাড়ে আট লাখ ভক্ত হজে অংশ নিচ্ছেন।

তবে বরাবরের মতোই প্রতিটি দেশের জন্য সংখ্যা নির্ধারণ করেছে সৌদি সরকার। এবার বিশ্বে হজযাত্রীর সংখ্যা গড়ে ৬০ শতাংশ কমেছে। ২০১৯ সালে সর্বশেষ হজযাত্রীর সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ। এবার তা নেমে এসেছে ১০ লাখে। এবার বাংলাদেশ থেকে ৬০ হাজার নারী-পুরুষ হজ করার সুযোগ পেয়েছেন। করোনা মহামারির আগে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজারের বেশি মানুষ হজ করেছিলেন। এবার কোটা অর্ধেক কমিয়ে আনা হয়েছে, এমনকি ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত।

পবিত্র হারাম শরীফের পূর্ব দিকে ইব্রাহিম আল খলিল রোডের মিসফালা এলাকায় অবস্থিত বাড়িতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করতে আসা বাংলাদেশিদের রাখা হয়। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় আসা মুসল্লিদের স্থান হয়ে গেছে হারাম শরীফের পাশে কিংবা দুই থেকে তিন কিলোমিটার দূরে হোটেলগুলোতে।

প্রতিবারই নামাজের আযানের আগে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষসহ বাংলাদেশি দলে দলে হারাম শরীফের উদ্দেশে রওনা হন। এ সময় রাস্তাঘাট জমজমাট  হয়। সে এক অকল্পনীয় দৃশ্য। পথচারী মানুষের তৃষ্ণা মেটাতে সৌদি আরবের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিনামূল্যে জমজমের পানি বিতরণ করছে। এ ছাড়া প্রচণ্ড গরমে হাজীদের যাতে ভোগান্তিতে না পড়তে হয় সেজন্য নামাজ শুরুর পরপরই রোড ডিভাইডারে বসানো উঁচু ফোয়ারা থেকে রাস্তায় ঠান্ডা পানি ছিটানো হচ্ছে। কিন্তু তার পরেও বৈরী আবহাওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন অনেকেই।

মক্কায় বাংলাদেশ হজ অফিসের কাউন্সিলর (হজ) জহিরুল ইসলাম জানান, বুধবার রাতে একটি নির্ধারিত গাড়িতে করে হজযাত্রীদের মিনায় নিয়ে যাওয়া হয়। ইতিমধ্যেই হজযাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যাতে নিরাপদে ও কোনো বাধা ছাড়াই হজ পালন করতে পারেন সেজন্য সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীদের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত সংখ্যক গাইড ও শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, হজে আসা বাংলাদেশিদের মধ্যে ৫ জুলাই পর্যন্ত ১২ জন মারা গেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *