জমিয়াতুল ফালাহতে কারবালা মাহফিলের অনুমতি নিয়ে কি হচ্ছে?

0

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান জমিয়তুল ফালাহ কমপ্লেক্সে ‘কারবালা মাহফিল ও কিরাত সম্মেলন-এর অনুমতি নিয়ে কী হচ্ছে? চট্টগ্রামে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একজন বিভাগীয় পরিচালকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পরিচালক নিজেকে ‘সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি অতীতেও তিনি জমিয়াতুল ফালাহতে আন্তর্জাতিক কিরাত সম্মেলন হতে দেননি। আবারও সেই পথে হাঁটছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

যদিও পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ারের দাবি, মাহফিল হবে। এ নিয়ে তিনি কোনো বিভ্রান্তি ছড়াননি। নতুন আবেদন পেলে নিয়ম মেনে অনুমতি দেওয়া হবে। এ বিষয়ে ‘গুজব’ বন্ধে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের চট্টগ্রাম কার্যালয় একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছে।

আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, গত ৩৬ বছর ধরে পবিত্র মহরম মাসে কারবালা মাহফিল ও কিরাত সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। প্রতি বছর এই অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। এবারও ১ থেকে ১০ই মহররম পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করা হবে। কিন্তু এ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক তৌহিদুল আনোয়ার।

গত ১ জুন জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের দ্বিতীয় তলায় মাহফিল করার জন্য ধর্মমন্ত্রীকে চিঠি দেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী। কিন্তু ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক তৌহিদুল আনোয়ার এই মাহফিল বন্ধ করার জন্য দাপ্তরিক চিঠি দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ আছে।

মাহফিলের অনুমতি নিয়ে পরিচালক বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, সমাবেশ বন্ধের কোনো চিঠি তিনি দেননি। অথচ মাহফিল যেন না হয় সে জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে চিঠি ইস্যু করতে বলেছেন বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে আয়োজকদের একজন মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “আমরা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে গত ৩৬ বছর ধরে শান্তিপূর্ণভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছি। আমরা চাইলেও জমিয়তুল ফালাহ প্লাজার বাইরে এই অনুষ্ঠান করতে পারি না। কারণ। দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ অতিথিরা এতে অংশ নেন। তাদের নিরাপত্তার কথা আমাদের বিবেচনায় রাথতে হবে।

এই মাহফিল বন্ধ হলে  লাখও ধর্মপ্রাণ মুসলমান আঘাত পাবেন বলে  জানিয়ে তিনি বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন অনুমতি না দিলে মাহফিলের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যাবে না। লাখো শান্তিপ্রিয় মুসলমান এই পবিত্র অনুষ্ঠানে শামিল হয়। তারা যদি জানতে পারে যে এবারের মাহফিল হচ্ছে না তাহলে তারা খুবই মর্মাহত হবেন। আঘাত পাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তৌহিদুল আনোয়ার ২০২১ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক কোরআন তেলাওয়াত সম্মেলন করার অনুমতিও দেননি। সম্মেলনটি জমিয়াতুল ফালাহ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১-এ ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক জারি করা একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, “জামিয়াতুল ফালাহ মসজিদে কারবালা মাহফিলের পরিচালনা পর্ষদ ২০ তম আন্তর্জাতিক কিরাত সম্মেলন ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ করার জন্য আবেদন করা হয়েছে।

‘ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয় জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ ও কমপ্লেক্সের মাঠসহ অন্যান্য জায়গা ব্যবহারের নীতিমালা প্রণয়ন এবং ভাড়া নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। মসজিদের দ্বিতীয় তলায় মুসল্লিদের নামাজ ও ইবাদতের সুবিধার্থে মূল মসজিদের দ্বিতীয় তলায় সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা, দুই পাশের বারান্দা বন্ধের সুপারিশ করেছে কমিটি। এ কারণে আয়োজক কর্তৃপক্ষ “আন্তর্জাতিক কিরাত মাহফিল-২০২১” অনুমোদন দেয়নি। চিঠিতে স্বাক্ষর করেন মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার।

আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে চট্টগ্রামস্থ ইসলামিক ফাউন্ডেশন অফিস থেকে চিঠি পাঠানো হলেও, কিন্তু সভাটি ২ জানুয়ারী ২০২২ তারিখে হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে ২৩ জানুয়ারী । কিন্তু তার আগে কিরাত সম্মেলনের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তৌহিদুল আনোয়ার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর পেছনে রয়েছে নিজেকে সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর হিসেবে প্রতিষ্ঠিার অপচেষ্টা।

তবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই মাহফিল হবে। আমি কোনো বাধা সৃষ্টি করিনি। এটা অপপ্রচার। এই সমস্যা সমাধান করা হয়েছে। তারা আবারও আবেদন দেবেন বলে জানিয়েছেন। নতুন আবেদন পেলেই মাহফিলের অনুমোদন দেওয়া হবে।

এদিকে, ইসলামিক ফাউন্ডেশন গত ১০ জুন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, “বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানো হচ্ছে যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন সম্প্রতি চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে ‘শাহাদাতে কারবালা মাহফিল’ বন্ধ করে দিয়েছে।” এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং বিভ্রান্তিকর। কারবালা মাহফিল কর্তৃপক্ষ এখনও অনুষ্ঠানের জন্য দিনক্ষণ নির্ধারণ করে এখনো আবেদন করেননি।

এই বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন জামিয়াতুল ফালাহ মসজিদ ও কমপ্লেক্সের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার ।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মরহুম খতিব হযরত মাওলানা মুহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল কাদেরী (রহ.)। তিনি শুধু খতিবই ছিলেন না,তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একজন গভর্নরও ছিলেন। শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের মত পবিত্র একাট মাহফিলকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন সর্বদা সহযোগিতা করে আসছে।

গত ২ জানুয়ারি ঢাকায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের ২১২তম সভায় মসজিদের দ্বিতীয় তলায় প্রধান মসজিদ ও সংলগ্ন সাহান শুধুমাত্র নামাজ ও ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। যে কোনো ধর্মীয় সভা-মাহফিল মসজিদের নিচতলায় বা মাঠে অনুষ্ঠিত হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়,  কারবালা মাহফিল কর্তৃপক্ষ এখনও অনুষ্ঠানের জন্য দিনক্ষণ নির্ধারণ করে এখনো আবেদন করেননি,আবেদন করলে অতীতের মতোই  ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। বিষয়টি নিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি অবগত আছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *