ডিম ও সবজির দিকে ঝুঁকছেন নিম্ন আয়ের শ্রমিকরা।হোটেলগুলোতে মাছ-মাংসের চাহিদা কমেছে
বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে ২৭ বছর বয়সী নিলয় দূরপাল্লার বাস সৌদিয়া পরিবহনের কাউন্টারের সামনে যাত্রী ডাকাডাকির (কলম্যান) কাজ করেন। তার দৈনিক মজুরি ২০০ টাকা। টার্মিনালের পিছনের হোটেলে দিনে তিন বেলা খেতে তার খরচ হয় ১৭০ টাকা।
তিনি বলেন, তিন-চার মাস আগেও হোটেলে তিন বেলা খেতে ১২০ টাকা খরচ হতো। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে খাবারের দামও বেড়েছে ৫০ টাকা। সে হিসাবে প্রতি মাসে তা বেড়েছে দেড় হাজার টাকা। তবে তার বেতন এক পয়সাও বাড়েনি।
নিলয় যে নিয়মিত হোটেলে খায় সেটি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। নাম মদিনা হোটেল। ভাঙ্গা টিনের ঘরে শুধু পরিবহন শ্রমিকরা খায়। তাদের সবাই দৈনিক মজুরি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি এসব মানুষের জীবনে অকথ্য দুর্দশা নিয়ে এসেছে।
সৌদিয়া পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা বেলাল হোসেন বলেন, হোটেলে এক পিস রুই মাছের দাম ৮০ টাকা। দুই মাস আগেও দাম ছিল ৫০ টাকা। ৫ টাকা দাম এখন ১০ টাকা হয়েছে। অগত্যা মাছ-মাংস খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। তিনি জানান, গত ১০ বছর ধরে তিনি হোটেলে খাচ্ছেন। ৫০ টাকায় দুপুরের খাবার খেতেন। এখন আপনি ১০০ টাকার নিচে পাবেন না।
পরিবহন শ্রমিক আবুল কালাম ও নিলয় জানান, তারা শুধু সবজি দিয়ে ভাত খাচ্ছেন এবং মাছ-মাংস খাওয়া বন্ধ । তারা তিন-চার মাস গরুর মাংস খাননি। এই বাস টার্মিনালে পাঁচ হাজারের বেশি শ্রমিকের জীবন কাহিনী প্রায় একই।
মদিনা হোটেলের মালিক জুয়েল জানান, গত দুই মাসে তিনি সব ধরনের পণ্যের দাম ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছেন।
এরপর প্রতি বস্তা চালের দাম ৩০০ টাকা বাড়লেও তারা এখনো ১০ টাকায় ভাতের প্লেট বিক্রি করছেন। পণ্য ও জ্বালানির দাম কয়েকগুণ বাড়লেও ক্রেতা ধরে রাখতে নতুন কোনো পণ্যের দাম বাড়ায়নি তারা। কম ব্যবসা করে দোকান ভাসিয়ে রাখার লড়াই করছেন তিনি।
পঞ্চাশের দশকের আবদুস সোবাহান প্রায় ৭ বছর ধরে এই হোটেলে বাবুর্চির কাজ করছেন। তার দৈনিক বেতন ৩৭০ টাকা। এই টাকায় তার ৫ জনের সংসার চলে না। তবে মালিকের অসহায়ত্ব তিনিও বোঝেন। তিনি বলেন, ‘আমি দেখতে পাচ্ছি মালিকের কী লাভ হচ্ছে। তার জন্য বেতন বাড়ানোর কথা কই না। ‘