বন্যা।সিলেটের ৫৩৬ কিলোমিটার সড়ক এখনো পানির নিচে

0

সিলেটে বন্যার পানি কমতে থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত, পুনঃনির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির তালিকা তৈরি এবং শহরকে বন্যামুক্ত রাখতে কী করা দরকার তা নির্ধারণের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে, সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও জেলার ৫৩৬ কিলোমিটার সড়ক এখনো পানির নিচে। অন্যদিকে, উপরিভাগ থেকে নেমে আসা পদ্মার পানিতে ফরিদপুরের নিম্নাঞ্চলের শত শত একর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এতে মূলত বাদাম চাষ হতো।

সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিএসআইসি), সড়ক ও জনপথ বিভাগ (আরএইচডি) এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি নগরীর বন্যার ক্ষয়ক্ষতি, তালিকা তৈরি করে প্রতিবেদন তৈরি করবে। এই কমিটির যৌথ প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

রোববার নগরীর বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে সব বিভাগ ও স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে নগরীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিসিক আয়োজিত নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ কে আব্দুল মোমেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মুষলধারে বৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা ও আকস্মিক বন্যায় সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে দুর্যোগ পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও ঘরবাড়ির তথ্য সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠালে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। এ সময় তিনি সুরমা নদী খনন, নগরীর পুকুর ও দীঘি উদ্ধার ও খনন এবং ছড়াগুলো শতভাগ উদ্ধারের নির্দেশ দেন। এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে শহরকে রক্ষা করতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সভায় শহরের দুর্গত এলাকায় ত্রাণ, স্বাস্থ্যসেবা ও বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও আসন্ন বর্ষা মৌসুমে নগরীতে বন্যার পানি প্রবেশ ঠেকাতে এবং নগরীর অভ্যন্তরে নিচু এলাকায় নদীর তীর উঁচু করতে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়। বন্যা থেকে শহর রক্ষায় সুরমা নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে নদী ড্রেজিংয়ের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। উচ্চ পর্যায়ের গবেষণার পর সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।

৫৩৬ কিলোমিটার সড়ক পানিতে: এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেটের সড়কগুলো। দুই দিন ধরে পানি কমলেও অনেক সড়ক এখনো পানির নিচে। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পুরো পরিমাণ নির্ণয় করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

প্রাথমিকভাবে, সিসিকের ৫৩৬ কিলোমিটার, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং সড়ক ও জনপথ (আরএইচডি) সড়ক পানির নিচে রয়েছে বলে জানা গেছে। বন্যার পানি কমলেও এসব রাস্তা মেরামত করতে অনেক সময় লাগবে। সূত্র জানায়, সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকার প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ২৩০ কিলোমিটার এবং সড়ক ও জনপথ (আরএইচডি) আওতাধীন আটটি সড়কের ৫৫ কিলোমিটার পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে অনেক সড়কই সাময়িকভাবে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, সিসিক এলাকায় পাঁচশ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। ২৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টি ওয়ার্ডের প্রায় ২৫ কিলোমিটার সড়কে বন্যার পানি উঠেছে। এসব সড়কের অনেক জায়গায় যানজট কম। সড়কের পাশে বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকায় এসব সড়ক খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, পানি কমলেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে কাজ শুরু করা হবে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল কবির জানান, তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন সিলেট জেলার ১০টি উপজেলার ৮টি সড়কের ২৩০ কিলোমিটার এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জেলা ও উপজেলা সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুস্তাফিজুর রহমান জানান, ৫৫ কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে এবং অনেক স্থানে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে।

অন্যদিকে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তবে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা জানান, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। চার-পাঁচ দিনের মধ্যে আবার পানি আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *