জিএসপি পুনঃপ্রতিষ্ঠার পক্ষে যুক্তি দেবে বাংলাদেশ
আগামী ২ জুন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ-মার্কিন উচ্চ পর্যায়ের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব পরামর্শক সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ দেশের পর্যটন, স্বাস্থ্যসেবা এবং প্লাস্টিক ও পেট্রোকেমিক্যাল খাতে মার্কিন বিনিয়োগ আশা করছে। এ জন্য এসব খাতের সম্ভাবনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সামনে তুলে ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। একই বৈঠকে, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক স্থগিত বাংলাদেশের জন্য অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা জিএসপি পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ যুক্তি দেবে।
এই বৈঠকের আগে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে দুটি প্রস্তুতিমূলক বৈঠক করেছে। আগামী ১২ মে বিডা কার্যালয়ে তৃতীয় প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য ও বিডার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব পরামর্শক সভায় উভয় দেশেরই লাভবান হতে পারে এমন বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। দুই দেশ তাদের অগ্রাধিকার নিয়ে আলোচনা করে। আগামী জুনে উপদেষ্টা কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের আলোচনা নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে দেখে। কারণ দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্যের প্রায় ২০ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা তৈরি পোশাক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্লাস্টিক পণ্যের একটি প্রধান বাজার। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণও দেশটিতে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়।
বাংলাদেশের এজেন্ডা: বাংলাদেশ বিশ্বাস করে যে ভবিষ্যতে পর্যটন ও আতিথেয়তা, স্বাস্থ্যসেবা এবং প্লাস্টিক ও পেট্রোকেমিক্যালে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ থাকবে। ফলে বাংলাদেশ মার্কিন বিনিয়োগকারীদের এসব দেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানাবে। এর বাইরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের সমর্থনে করণীয় নিয়ে আলোচনা বাংলাদেশের আলোচ্যসূচিতে গুরুত্ব পাচ্ছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য মানে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বাণিজ্য বাড়ানো, এ বিষয়ে আলোচনা করবে বাংলাদেশ। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানির জন্য ‘ডুয়াল ফিউমিগেশন’ পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা হবে।
এই বৈঠকে ঢাকা নতুন ব্যবসায়িক সহযোগিতার ওপর জোর দেবে। বিশেষ করে, তথ্যপ্রযুক্তি খাত, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং জাহাজ নির্মাণের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ চায় মার্কিন উদ্যোক্তারা এসব ক্ষেত্রে এগিয়ে আসুক। স্থানীয়ভাবে করোনা ভ্যাকসিন উৎপাদনসহ ওষুধ শিল্পে সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা হবে। বৈঠকে বাংলাদেশে মার্কিন বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট পুনরায় চালু করার বিষয়েও আলোচনা হবে। দ্বিতীয় অধিবেশনে বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে আনার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করবে। বাংলাদেশ মনে করে, জিএসপি পাওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সব শর্তই পূরণ করেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে শ্রম অধিকার, কারখানার নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশের উন্নয়ন, পরিবেশ উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়েছে। ২০১৩ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জিএসপি স্থগিত করে। তারা এই সুবিধা পুনরুদ্ধারের জন্য কিছু শর্ত অফার করে। প্রয়োজনীয় সব শর্ত পূরণ হয়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনার বিষয়: এই বৈঠক উপলক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে এজেন্ডা নির্ধারণ করেছে তার মধ্যে একটি হল সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবকাঠামো উন্নয়ন এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং ডিজিটাল অর্থনীতিতেও আগ্রহী। এছাড়াও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমুদ্র অর্থনীতি (নীল অর্থনীতি) এবং জ্বালানি খাতকে শক্তিশালী করতে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। শেষ অংশে মার্কিন প্রতিনিধি দল বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন এবং শ্রম অধিকার বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করবে। তারা পরিবেশ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা করবেন। আলোচনা শেষে এ বিষয়ে যৌথ বিবৃতি দেবে দুই দেশ।