বিশাল খরচেও যানজটের ধকল।চট্টগ্রামে ১৫ হাজার কোটি টাকার অবকাঠামো
যানজটের দুর্ভোগ নিরসনে বন্দরনগরী চট্টলায় নানা উন্নয়ন কর্মসূচির আয়োজন । এক দশকে ফ্লাইওভার নির্মাণসহ অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। এরপরও নগরবাসীর মুখে হাসি ফেরেনি। উল্টো যানজট দ্রুত হয়। বছর বছর গাড়ির গতি কমছে। এই রমজানেও যানজটের ভয়াবহ রূপ দেখছেন দ্বিতীয় রাজধানী চট্টগ্রামের মানুষ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা এবং অনিয়মিত উন্নয়নই গাড়ি দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। টেকসই সমাধানের জন্য পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমের প্রতিস্থাপন, ব্যক্তিগত যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ এবং পরিকল্পিত সড়ক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী চার বছর আগে শহরের রাস্তায় গণপরিবহনের গতি ছিল ১০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা, যা এখন আরও কমিয়ে আনা হয়েছে। যানজটের একটি বড় কারণ হল শহরের রাস্তায় ৯২ শতাংশ ছোট যানবাহন চলাচল করে, যা শহরের রাস্তার ৭০ শতাংশ দখল করে। মাত্র ৩০ শতাংশ মানুষ এসব যানবাহনে যাতায়াত করে। বাকি ৭০ শতাংশ যাত্রী গণপরিবহনে যাতায়াত করেন। অথচ এই গণপরিবহনই মোট যানবাহনের মাত্র ৮ শতাংশ।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, চট্টগ্রামে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। এর মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৫২ হাজার মোটরসাইকেল। এরপর রয়েছে ৩৬ হাজারের বেশি প্রাইভেট কার। নগরীতে চলাচলকারী বাসের সংখ্যা মাত্র ২,০৯৯টি। সিটি করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, চট্টগ্রাম নগরীতে মাত্র ১ হাজার ১৭৯ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে যার মধ্যে প্রায় দেড়শ কিলোমিটার প্রধান সড়ক। স্বাভাবিক যান চলাচলের জন্য রাস্তা কয়েকগুণ বেশি প্রয়োজন।
উন্নয়নে খরচ হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা: চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নগরীতে এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি ফ্লাইওভার ও একটি ওভারপাস নির্মাণ করেছে। শুরু থেকেই ফ্লাইওভার নির্মাণের বিরোধিতা করেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। সে সময় তাদের আপত্তি শোনেনি সিডিএ। এখন সেই ভুলের মাশুল গুনছেন নগরবাসী। এদিকে সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে লালখানবাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এখনো নির্মাণাধীন রয়েছে। এছাড়া গত এক দশকে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪টি সড়ক নির্মাণ, সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কালুরঘাট-চাক্তাই ও বাকালিয়া এক্সেস রোড নামে দুটি সড়ক প্রকল্প নির্মাণাধীন রয়েছে। এ ছাড়া সড়ক উন্নয়নে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিএইচসি) ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। বেশি খরচ হলেও সড়কে যানজট কাটেনি।
বাড়ছে যানজট, কমেছে বাসের গতি : এক দশক আগে সিডিএ ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর পরিচিতি মোড় থেকে অক্সিজেন পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করে।
রোববার বিকেলে অক্সিজেন থেকে ২ নম্বর গেট পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মারজান আক্তারের। রমজানের দিনে প্রখর রোদে শ্বাস নিলেন মারজান। শুধু এই সড়ক নয়, প্রায় সব সড়কেই অসহনীয় যানজট এখন নগরবাসীর নিত্যসঙ্গী। রমজানে তা বেড়েছে।
ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল হাকিম নগরীর বাণিজ্যিক এলাকা বহদ্দারহাট থেকে আগ্রাবাদে নিয়মিত যাতায়াত করেন। তিনি বলেন, ‘বহদ্দারহাট থেকে আগ্রাবাদের দূরত্ব মাত্র সাত কিলোমিটার। গাড়িতে করে এই সড়কে যেতে প্রতিদিন ৪৫ থেকে এক ঘণ্টা সময় লাগে। তবে এ সড়কে ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। তারপরও সুফল পাচ্ছেন না নগরবাসী।
ছোট যানবাহনের দখলে সড়ক : চট্টগ্রাম মহানগরীর কৌশলগত পরিবহন মহাপরিকল্পনা জরিপে দেখা গেছে, নগরীর ২৯ শতাংশ সড়কই ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে। মাত্র ১৩ শতাংশ মানুষ এই যানবাহনে যাতায়াত করে। বিপরীতে, বাসগুলি সড়কের মাত্র ১৭ শতাংশ দখল করে এবং ৪৮ শতাংশ যাত্রী বহন করে। সিএনজি অটোরিকশা এবং রিকশা ২৮ শতাংশ রাস্তা দখল করে এবং মাত্র ১৬ শতাংশ মানুষ এই যানবাহন ব্যবহার করে। টেম্পো৭ শতাংশ জায়গা দখল করে এবং ১২ শতাংশ যাত্রী বহন করে। এছাড়াও, হিউম্যান হলার রাস্তার ৭ শতাংশ দখল করে এবং ১০ শতাংশ যাত্রী বহন করে।