ব্যক্তি পর্যায়ে ৬০ বিঘার বেশি জমি থাকলে বাজেয়াপ্ত
ব্যক্তি ও পারিবারিক পর্যায়ে ৬০ বিঘার বেশি জমি অধিগ্রহণ না করার বিধান রেখে ভূমি সংস্কার আইন-২০২২ প্রণয়ন করা হচ্ছে। দেশের কোনো ব্যক্তি বা পরিবার এর চেয়ে বেশি জমির মালিক হলে সরকারের অনুকূলে অতিরিক্ত জমি বাজেয়াপ্ত করা হবে। বিশেষায়িত শিল্প ও জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমসহ বিশেষ ক্ষেত্রে ৬০ বিঘার বেশি জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আইনটির খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের সুপারিশ করে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। খসড়াটি পরবর্তী মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হতে পারে।
খসড়া ভূমি সংস্কার আইনে ছয়টি অধ্যায় ও ২৬টি ধারায় দুই থেকে আড়াই উপধারা রয়েছে। এর মধ্যে কৃষিজমি অধিগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা, বেনামি লেনদেন/স্থায়ী সম্পদ হস্তান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা, বাস্তুভিটা, বর্গাধর, সাইরাত মহলকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান পিএএ বলেন, ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশকে ভূমি সংস্কার আইনে পরিণত করা হচ্ছে। ভূমি বণ্টন ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ফলে দেশের সিংহভাগ জমির মালিক হওয়ার সুযোগ পাবে না মুষ্টিময় কিছু মানুষ। এ কারণে ব্যক্তি ও পারিবারিক পর্যায়ে ৬০ বিঘা পর্যন্ত জমি ক্রয় বা অধিগ্রহণের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। যারা বেশি জমির মালিক তাদের উদ্বৃত্ত জমি সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হবে। তবে সরকার বা সরকার প্রধানের অনুমতি সাপেক্ষে কিছু ক্ষেত্রে ৬০ বিঘার ওপরে জমি অধিগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার দাস বলেন, আইনটি কার্যকর হওয়ার পর ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা-উপজেলা প্রশাসন সারাদেশে অভিযান পরিচালনা করবে।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, কেউ যদি অতিরিক্ত ৬০ বিঘা জমির মালিকানা গোপন করে, তার অতিরিক্ত জমির মূল্য পরিশোধ না করে বাজেয়াপ্ত করা হবে। আর যারা স্বেচ্ছায় ৬০ বিঘা জমির মালিক হয়ে অতিরিক্ত জমি ঘোষণা করবেন, সরকার সেখানে মৌজা হার অনুযায়ী তাদের অতিরিক্ত জমি কিনবে।
সরকার অভিযান চালিয়ে ৬০ বিঘার বেশি জমি গোপনে রক্ষা ও দখলকারী ব্যক্তির অতিরিক্ত জমি বাজেয়াপ্ত করবে। দেশের যেকোনো নাগরিক সরকারকে অতিরিক্ত জমির তথ্য দিতে পারেন।
কেউ যদি অতিরিক্ত ৬০ বিঘা জমির বিষয়ে সরকারকে অবহিত করেন, তাহলে তাকে তার মোট জমির কোন অংশ তিনি নিজের জন্য রাখবেন এবং কোন অংশ ছেড়ে দেবেন তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। তার কাছ থেকে পাওয়া জমি ১ নম্বর খাতায় থাকবে। এক বিঘা ৩৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
১০০% রপ্তানিমুখী কৃষি পণ্য বা কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের ক্ষেত্রে, সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে অতিরিক্ত ৬০ বিঘা জমি ক্রয় বা অধিগ্রহণ করা যেতে পারে। একইভাবে, ১০০% রপ্তানিমুখী বিশেষায়িত শিল্পের জন্য, সরকারের অনুমতি নিয়ে অতিরিক্ত ৬০ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কত জমির পরিমাণ আইনে উল্লেখ নেই।
অন্য শিল্প স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত ৬০ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করতে পারবে।
খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা তার পরিবারের ৬০ বিঘার বেশি কৃষি জমি থাকলে তিনি হস্তান্তর, উত্তরাধিকার, দান বা অন্য কোনো উপায়ে নতুন কোনো কৃষিজমি অধিগ্রহণ করতে পারবেন না। তবে সরকারি অনুমোদন সাপেক্ষে যেকোনো প্রতিষ্ঠান জনকল্যাণের জন্য অতিরিক্ত জমি অধিগ্রহণ করতে পারে। চা, কফি, রাবার বা অন্যান্য বাগানের জন্য অতিরিক্ত জমিও পাওয়া যাবে। এ ছাড়া নিজস্ব কারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য ওয়াকফ, দেবোত্তর, ধর্মীয় ট্রাস্ট, দাতব্য কাজের জন্য ৬০ বিঘার ওপরে জমি অধিগ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, ভূমি সংস্কার বোর্ড হাটবাজার ও চর এলাকায় সরকারি জমি চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট কালেক্টরদের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসবে। খাস পুকুর, জলাশয়সহ সব ধরনের সাইরাত সংরক্ষণ করা হবে।