বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে রেহমান সোবহান।পরিকল্পনা কমিশনের পরিকল্পনা উঠে গেছে

0

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, পরিকল্পনা কমিশনের পরিকল্পনা উঠে গেছে। এখন সংগঠন চলে সিস্টেমে। এটা পরিকল্পনা বা পরিকল্পনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বাইরের পরামর্শকদের নিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সরকারি নীতি প্রণয়নে পরিকল্পনা কমিশনের আর কোনো প্রভাব নেই।

অধ্যাপক রেহমান সোবহান তার আত্মজীবনীমূলক বই ‘অ্যান্ট্রানকুইল রিকলেকশনস: পলিটিক্যাল ইকোনমি অব নেশন বিল্ডিং ইন পোস্ট লিবারেশন বাংলাদেশ’-এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ধানমন্ডির কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রফেসর রেহমান সোবহানের সহধর্মিণী ও সিপিডির অনারারি ফেলো প্রফেসর রওনক জাহান। রেহমান সোবহান বলেন, স্বাধীনতার আগে বায়তুল মোকাররমে পাকিস্তানিদের ব্যাংক বীমা এমনকি একটি ছোট দোকানও ছিল। দেশ পরিচালনার সব সিদ্ধান্ত পাকিস্তানে নেওয়া হয়। সেখানে বাঙালি ছিল না। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ একটি উপনিবেশ থেকে স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়। পাকিস্তানিরা সবাই নিখোঁজ। ব্যবসা-বাণিজ্য, দোকানপাটও নেই। তখন ধ্বংসস্তূপ থেকে জাতি গড়ে তোলা, বৈশ্বিক স্বীকৃতি লাভ এবং অর্থনীতির ভিত গড়ে তোলা- এগুলো ছিল খুবই কঠিন কাজ। তাকে তখন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে হয়েছে। সরকারকে বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করতে হয়েছে। নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে স্বর্গ-নরকের ব্যবধান রয়েছে। তখন সব পরিকল্পনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। হত্যার পর সে কারেন্ট ভেঙ্গে যায়। রেহমান সোবহান বলেন, সরকারের নীতি নিয়ে এখনো অনেক কথা বলা হলেও বাস্তবায়ন নিয়ে কম।

বইটি নিয়ে আলোচনা করেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, রেহমান সোবহানের বইটিতে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অর্থনীতির ভিত্তিতে একটি অনন্য উপস্থাপনা রয়েছে। তিনি বলেন, রেহমান সোবহান শুধু একজন পেশাদার অর্থনীতিবিদই নন, তিনি দেশ, সরকার ও জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। বইটি শুধু বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তি নয়; একই সঙ্গে তিনি রাজনৈতিক উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন।

আলোচনায় সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান বলেন, মুজিবনগর সরকার ও পরিকল্পনা কমিশন গঠনে রেহমান সোবহানের বড় ভূমিকা রয়েছে। তিনি প্রজন্মের জন্য জ্ঞান ও অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। সাইদুজ্জামান বলেন, রেহমান সোবহান দুই বছরের ছোট হলেও তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল বায়েস বলেন, কর্মজীবনে রাজনৈতিক অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করেছেন ড. রেহমান সোবহান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে তিনি আড়াই বছর পরিকল্পনা কমিশনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি রাজনীতিতে যোগ দিতে আগ্রহী ছিলেন। তবে ভাষাটা ঠিকমতো বলতে পারতেন না। এটাই ছিল বড় বাধা। এ বইয়ে অধ্যাপক রেহমান সোবহানও তা স্বীকার করেছেন। ১৬তম অধ্যায়ে শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়নের প্রশংসা করা হয়েছে। তবে বঙ্গবন্ধু এমন উন্নয়ন চাননি- এটাও উল্লেখ করা হয়েছে।

ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিক শাসন শুরু হয় এবং এর মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়ন ছিন্নভিন্ন হয়। জাতীয় চিন্তার বিকাশ থমকে যায়। জাতি উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। রেহমান সোবহানের স্মৃতিকথাতেও সেসব বিষয় রয়েছে। গল্পের মাধ্যমে তিনি অনেক কিছু প্রকাশ করেছেন।

সিপিডির অনারারি ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমানে ৯০ শতাংশ মানুষের জন্ম ‘৭৫-এর পর; তারা স্বাধীনতার ইতিহাস সম্পর্কে খুব কমই জানে। এই বইটিতে আপনি ইতিহাস, রাজনীতি এবং অর্থনৈতিক দলিল দেখতে পাবেন। ছয় দফার প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার রচনায় অর্থনীতিবিদরা কীভাবে সহযোগিতা করেছেন, সেই বিষয়গুলোও উঠে এসেছে। ফলস্বরূপ, এটি আজ খুব প্রাসঙ্গিক।

রওনক জাহান বলেন, অনেক ইতিহাস জাতির জানা নেই বা জানতে দেওয়া হয়নি। বই থেকে সেসব কথা জানা যাবে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় দল কেন কিছুই করেনি, তার কারণ রয়েছে এই বইয়ে। বইটিতে রেহমান সোবহান গল্পের মাধ্যমে তার ব্যক্তিজীবনের সঙ্গে ইতিহাস তুলে এনেছেন ।

বইটি নিয়ে অন্যদের মধ্যে আলোচনা করেন জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক বিদ্যাপীঠের মহাপরিচালক ড. আহরার আহমেদ, জায়েদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাবিবুল হক খন্দকার, রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশের (আরইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা এবং বইটির প্রকাশক ইউপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *