মুন্সীগঞ্জ ও নওগাঁর ঘটনা।মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন

0

মাঠ পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তদারকি ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শিক্ষা কর্মকর্তারা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত কোনো ঘটনা তারা আদৌ সামাল দিতে পারছেন না। ফলে শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সম্প্রতি মুন্সীগঞ্জের পঞ্চসার ইউনিয়নে বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলকে কারাদণ্ড দেওয়ার বিষয়টি সুশীল সমাজে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে নওগাঁর মহাদেবপুরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পালের বিরুদ্ধে স্কুলের ইউনিফর্ম না পড়া ও হিজাব না পড়ায় ১৮ শিক্ষার্থীকে শাস্তি দেওয়ার অভিযোগে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাদের অযোগ্যতার বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। ঘটনা জানার পরও ওইসব এলাকার শিক্ষা কর্মকর্তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপে তারা স্কুলে যায়।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। তারা দাবি করেন, সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকরা তাদের ঘটনা দেরিতে জানিয়েছেন। তবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ স্বীকার করেছেন, কয়েকজন শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে তাদের সংকট রয়েছে।

শিক্ষক হৃদয় মন্ডল বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০ মার্চ বিকাল ৩ টায় দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য বিজ্ঞানের ক্লাস নিচ্ছিলেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি প্রাসঙ্গিকভাবে ধর্ম নিয়েও কথা বলেন। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী তার বক্তব্য মোবাইল ফোনে রেকর্ড করেন। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। ওই দিন স্কুল ছুটির পর কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের কাছে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। জানা গেছে, বিজ্ঞান ক্লাসে বিষয়ের প্রেক্ষাপটের বাইরে গিয়ে ধর্মীয় বিষয়ে প্রশ্ন করার রেকর্ড করা হয়েছে। এরপর প্রধান শিক্ষকসহ ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। আর সেই কারণেই বিজ্ঞান ক্লাসের এক ছাত্র শিক্ষককে ফাঁসানোর জন্য বারবার একই প্রশ্ন করতে থাকে। ছাত্রদের একাংশ প্রতিবাদও করেছে।

মুন্সীগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদ বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমাকে ২২ মার্চ ঘটনাটি জানিয়েছেন। এর আগে ২০ মার্চ শিক্ষার্থীরা গণিত ও বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। প্রধান শিক্ষকের কাছে ‘ধর্ম অবমাননা’ এবং গত ২১ মার্চ শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগ করে শাস্তি দাবি করে। প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন মিয়া অভিযুক্ত শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে ম্যানেজিং কমিটির নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। তারা বিষয়টি সমাধান করতে ব্যর্থ হলে তারা আমাকে বিষয়টি জানায়। এক প্রশ্নের জবাবে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ঘটনাটি তাৎক্ষণিকভাবে জানালে আমি বিদ্যালয়ে গিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করতে পারতাম। কিন্তু পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠলে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে ওই সময় আমাকে জানানোর পর আর কিছুই করার ছিল না।

ঘটনা জানতে পেরে তিনি কী ব্যবস্থা নিয়েছেন জানতে চাইলে নওগাঁ মহাদেবপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, এসব বিষয়ে মোবাইল ফোনে কোনো কথা হবে না। তার কাছে কোনো তথ্য থাকলে তিনি অফিসে আসতেই ফোন লাইন কেটে দেন।

ও নওগাঁ জেলা শিক্ষা অফিসার মো. লুৎফর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে তার কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারেন। এ খবর পেয়ে বিকেলে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি শিক্ষক, অভিভাবক, ছাত্র ও গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলেন এবং নিজে থেকে ঘটনার তদন্ত শুরু করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *