‘বোতলবন্দি’ বিএনপির ১৯ নেতা।কমিটিতে না থাকলেও অন্য ১২ নেতার মুখে হাসি

0

৩৮ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি। এর মধ্যে ১৯ নেতাকে ‘বোতলবন্দি’ করা হয়েছে। তারা অফিসে আছেন, কিন্তু কাজে রাখা হয়নি। তারা দল পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এমন সিদ্ধান্তে আঙুল উঠেছে বিএনপির শীর্ষ নেতা ড. গিনিপিগের মতো সুদূর লন্ডনে বসে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কমিটিকে ছিন্নভিন্ন করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি দল পুনর্গঠনে চট্টগ্রামকে একটি ‘পাইলট প্রকল্প’ হিসেবে দেখেন; বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা।

দলীয় পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরুর আগে বর্তমান কমিটির সদস্যদের খোঁজখবর নেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতা। বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি নিরপেক্ষ সূত্র থেকেও ‘আমলনামা’ এনেছেন তিনি। তারপর কাউকে ‘যোগ’ করে, কাউকে ‘বিয়োগ’ করে দল সাজানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছেন তারেক। দলে যোগ-বিয়োগের খেলা বিএনপির রাজনীতিতে এখন বেশ জনপ্রিয়। কেউ সুখী, কেউ অসুখী। দলের শীর্ষ নেতার ‘ভয়ে’ প্রতিক্রিয়া জানানোর সাহসও হারিয়ে ফেলেছেন ‘ঝরে পড়া’ নেতারা।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে ৩৯ সদস্য থাকলেও একজন মারা যাওয়ায় এখন কমিটি ৩৮ সদস্যের। দল পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় ১৯ জনের বিপরীতে কমিটির বাইরের ১২ নেতাকে যুক্ত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে দল পুনর্গঠন কার্যক্রমে ৩১ জন রয়েছেন।

চট্টগ্রামের বাইরে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতিকে ‘নিরপেক্ষ নেতা’ হিসেবে নিয়োগ দিয়ে দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছেন তারেক রহমান। এ জন্য সম্প্রতি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে একটি টাস্কফোর্সও গঠন করা হয়েছে। টাস্কফোর্সের প্রধান করা হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খানকে। পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্সের চার সদস্য হলেন মহানগর বিএনপি নেতা একরামুল করিম, আবদুস সাত্তার, সৈয়দ আজম উদ্দিন ও এসকে খোদা তোতন।

টাস্কফোর্সের সমন্বয়ে রয়েছেন বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জালাল উদ্দিন মজুমদার ও হারুনুর রশীদের কাছে। কমিটিকে সার্বিক সহযোগিতা করছেন নগর বিএনপির আহ্বায়ক ড. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর। এছাড়া টাস্কফোর্সের অধীনে গঠিত পাঁচটি কমিটি নগরীর আওতাধীন ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা পুনর্গঠনে কাজ করছে। এসব কমিটির প্রধান হলেন এরশাদুল্লাহ, এম এ আজিজ, কাজী বেলাল, নাজিমুর রহমান ও এস এম সাইফুল আলম।

দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়া ১৯ নেতা হলেন- আবু সুফিয়ান, শামসুল আলম, জয়নাল আবেদীন জিয়া, মাহাবুব আলম, মফিজুল হক ভূঁইয়া, নুরুল আলম রাজু, আশরাফ চৌধুরী, এসএম আবুল ফয়েজ, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, আনোয়ার হোসেন লিপু, নাজিম উদ্দিন আহমেদ। মঞ্জুর আলম মঞ্জু, জাহাঙ্গীর আলম দুলাল, আবুল হাসেম, গাজী সিরাজ উল্লাহ, কামরুল ইসলাম, মঞ্জুর আলম চৌধুরী, এশীন চৌধুরী লিটন, ইস্কান্দার মির্জা ও আবদুল মান্নান। এদের মধ্যে আবু সুফিয়ান চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়কের দায়িত্বও পালন করছেন। অন্য সাংগঠনিক জেলার দায়িত্বে থাকায় তিনি দল পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় নেই বলে দাবি করেন। গত ২১ মার্চ চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন তারেক রহমান। ওই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বিএনপির ১৯ নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সভায় নগর বিএনপির ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে দল পুনর্গঠনের জন্য পাঁচটি কমিটি গঠন করা হয়; তারা এতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

অন্যদিকে, কমিটিতে না থাকলেও বিএনপির ১২ নেতাকে বৈঠকে ডাকা হয়েছে। তারা হলেন- একরামুল করিম, সাহাব উদ্দিন, এসএমজি আকবর, খোরশেদ আলম, ইসমাইল বালী, মজিবুল হক, আবদুস সাত্তার সেলিম, শেখ নুরুল্লাহ বাহার, সিহাব উদ্দিন মুবিন, মোহাম্মদ আজম, মনোয়ারা বেগম মনি ও মামুনুল ইসলাম হুমায়ুন।

নগর বিএনপির কমিটির সদস্যদের মধ্যে বৈঠকে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন দলটির আহ্বায়ক ড. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর, এম এ আজিজ, মোঃ মিয়া ভোলা, আব্দুস সাত্তার, সৈয়দ আজম উদ্দিন, এস এম সাইফুল আলম, এস কে খোদা তোতন, নাজিমুর রহমান, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল, শাহ আলম প্রমুখ। হারুন জামান, মোহাম্মদ আলী, নিয়াজ খান, ইকবাল চৌধুরী, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, আরইউ চৌধুরী শাহীন ও এরশাদ উল্লাহ।

কমিটির এসব সদস্য ও নতুন নিয়োগ দিয়ে দল পুনর্গঠনে বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া টাস্কফোর্সের প্রধান আহমেদ আজম খান টাস্কফোর্সের সদস্য ও বিভিন্ন উপ-কমিটির সঙ্গে গত ২৯ মার্চ বৈঠক করেন। দল পুনর্গঠন থেকে দূরে রাখা বিএনপি নেতাদের তাতে ডাকা হয়নি।

আপাতত বিড়ম্বনায় পড়া এসব বিএনপি নেতারা দলের সিদ্ধান্ত ‘হজম’ করে ভালো সময়ের অপেক্ষায় রয়েছেন। উল্টো বিএনপির ১২ নেতা কমিটিতে না থাকলেও দলের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকায় বেশ উচ্ছ্বসিত। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে চান শীর্ষ নেতার মন জয় করতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *