খাদ্য সহায়তা।বিষণ্ণ মুখে এক ফালি আলো
বয়স ৮৪. জীবনের শেষ দিকে, তার মুখের হাসি ম্লান হয়ে যায়। শরীরও ভেঙে গেছে। আব্দুল মালেক রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদীর ধারে গানারপাড়ায় থাকেন। দুই ছেলে ও চার মেয়ে থাকা সত্ত্বেও তিনি ‘একা’। এই দিন এবং যুগে, তার পাশে কোন প্রিয় সন্তান নেই। তিন দিন খালি পেটে খাবারের সন্ধানে প্রতিদিন ভিন্ন পথে তাকে যুদ্ধে যেতে হয়। তা জমে ঠাণ্ডা হোক, প্রচণ্ড গরম হোক বা ঝড় বৃষ্টি। আবহাওয়া যাই হোক না কেন, মালেকের মনে হয় বিরতি নেই।
কিন্তু রোজা প্রতিবার মালেকের জন্য সুখবর নিয়ে আসে। অন্তত এক মাস তার ভাগ্যের আকাশে ভাবনার মেঘ উঠবে না! কারণ প্রতি বছরের মতো এবারও রমজানে তিস্তার চরসহ নগরীর অসহায় মানুষের মাঝে মাসব্যাপী খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে ‘কছির উদ্দিন কল্যাণ ফাউন্ডেশন’। গতকাল দুপুরে তিস্তা নদীর তীরবর্তী মহিপুর বাজারে এ কোম্পানির চাল, ডাল, ছোলাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী পেয়ে আব্দুল মালেকের বিষণ্ণ মুখে এক টুকরো আলো । হাতে খাবারের বস্তা নিয়ে বাড়ির পথে একাই হাঁটছে মালেক। পথে তিনি তার জীবনের গল্প বললেন।
মালেক বলেন, ‘আমার বাড়ি তিস্তার পাড়ে। এই শেষ বয়সে আলা কয়ো বিদ্রুপ করে না। মাইশকে খাবার দিলে আমি খাই। জীবনে চাওয়াগুলক বড় পানু! আমার বাকি জীবন দুঃখ এবং দুঃখজনক। রমজান মাসে আবারও চাল, ডাল, ছোলা পানু। আমি এখানে দীর্ঘ সময় থাকতে পারি।
কছির উদ্দিন ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন প্রতি বছর রমজান মাসে শহরের তিস্তার চরে প্রায় ৪,০০০ অসহায় ও অবহেলিত পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করে। ঈদের আগে সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় শাড়ি-লুঙ্গি।
কাছির উদ্দিন ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুল হক মানিক বলেন, প্রতি বছর রমজানে আমরা নগরীর দরিদ্র মানুষ এবং তিস্তার চরের দরিদ্র ও অবহেলিত মানুষদের এক মাসের খাদ্য সহায়তা দিয়ে থাকি। এই সহায়তা দুই বা তিন ধাপে দেওয়া হয়। তাদেরকে অসহায়দের তালিকা করে একটি কার্ড দেওয়া হয়। খাদ্য সহায়তা বিতরণের আগের দিন পুরো এলাকায় মাইকিং করা হয়। কার্ডধারীরা এসে তাদের খাদ্য সহায়তা নিয়ে যায়। আগামীতেও এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্রমবর্ধমান বাজারে এসব অসহায় মানুষের পাশে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে রমজান ও ঈদ উদযাপন করতে পারবে।