তৈরি পোশাকের রপ্তানির আদেশের ঢল

0

তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীনের আধিপত্য নিরঙ্কুশ। বড় রপ্তানিকারক দেশের মর্যাদা অনেক আগেই দখল করে আছে দেশটি। বাজার শেয়ারের দিক থেকেও চীন দ্বিতীয় এবং তৃতীয় প্রতিযোগীদের থেকে বড় ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে। ভিয়েতনাম দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ। পোশাক রপ্তানির প্রতিযোগিতায় এ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। অভ্যুত্থানের কারণে গত বছর ভিয়েতনামে দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ তার মর্যাদা হারিয়েছে। তবে পরিস্থিতি এখন বাংলাদেশের অনুকূলে। ব্র্যান্ড ও ক্রেতারা এখন এই দুই দেশ থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি অর্ডার নিয়ে আসছে। এ কারণে বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের রপ্তানি আদেশ বাড়ছে। ছোট-বড় বা সাব-কন্ট্রাক্ট কারখানা সব জায়গায় দিনরাত কাজ করে। কাজের চাপে কিছু কারখানা দুই শিফটে উৎপাদন করছে।

বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের একই মাসের তুলনায় জানুয়ারিতে রপ্তানি আদেশ বেড়েছে ৬৩ শতাংশ। মোট পরিমাণ ৩৭৫ কোটি ডলার। গত বছরের একই মাসে রপ্তানি আদেশ ছিল ২৩০ কোটি ডলার। এরপর থেকে ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি আদেশ বেড়েছে ৩২ শতাংশ। মাসে মোট  ২৬৩কোটি  ডলারের রপ্তানি আদেশ পাওয়া গেছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এর পরিমাণ ছিল ২০০ কোটি কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারি যেহেতু ২৮ দিনের মাস তাই উৎপাদন ও রপ্তানি অন্য মাসের তুলনায় অন্তত দুই দিন কম। এ কারণে রপ্তানি আদেশও অন্য মাসের তুলনায় কিছুটা কম। রপ্তানি আদেশ পাওয়ার পর প্রক্রিয়া শেষে উৎপাদন ও চূড়ান্ত রপ্তানি হতে প্রায় তিন মাস সময় লাগে। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির রপ্তানি আদেশের বাস্তব চিত্র পাওয়া যাবে আগামী এপ্রিলের রপ্তানি প্রতিবেদনে।

গত বছরের এপ্রিল থেকে দেশের রপ্তানি খাত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এরপর থেকে গত মাসের তুলনায় প্রায় প্রতি মাসেই রপ্তানি বাড়ছে।

জানতে চাইলে লায়লা স্টাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএ পরিচালক ইমরানুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের কাছ থেকে তারা আগের চেয়ে বেশি রপ্তানি অর্ডার পাচ্ছেন। চীনের সাথে দেশটির বৈরী সম্পর্ক এবং এর শুল্ক যুদ্ধের কারণে মার্কিন ক্রেতারা চীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। অনেক ক্রেতা চীন থেকে রপ্তানি আদেশ সরিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসছেন। বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং একটি কমপ্লায়েন্ট কাজের পরিবেশের সুবিধাও যুক্ত করা হয়েছে। ভবিষ্যতে রপ্তানি আদেশ বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

ব্র্যান্ড-ক্রেতারা শোরুমে সময়মতো পণ্য তুলতে কোনো ঝুঁকি নিতে চান না। এই কারণে, রপ্তানি আদেশ বিভিন্ন দেশে বিতরণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, অনেক ব্র্যান্ড ক্রেতা একই সময়ে বাংলাদেশ এবং চীনেও রপ্তানির আদেশ দেয়। এ ধরনের ক্রেতারা বাংলাদেশে তাদের রপ্তানি আদেশ বাড়িয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে, এটি দ্বিগুণ হয়েছে। উদ্যোক্তারা মনে করেন, চীন-ভিয়েতনাম থেকে অতিরিক্ত রপ্তানি আদেশ তুলে নেওয়া হয়েছে। কারণ, দুই দেশ একাধিক কারণে উৎপাদন সংকটে রয়েছে।

মিথিলা টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান আজহার খান বলেন, চীন থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি আদেশ প্রত্যাহার করার আরেকটি কারণ হিসেবে চীনের উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে। তিনি বলেন, কার্বন নিঃসরণ কমাতে সপ্তাহে তিন দিন উৎপাদন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন। এতে চীনের উৎপাদন ক্ষমতা অনেক কমে গেছে। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের পর থেকে চীনের লাল চিহ্নিত কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। সেখানকার শতাধিক কারখানা এখন বন্ধ। এ কারণে ব্র্যান্ড ও ক্রেতারা তাদের রপ্তানি অর্ডার চীন থেকে বাংলাদেশে স্থানান্তর করেছে। তারা কারখানায় রপ্তানির আদেশ এখন দ্বিগুণ হয়েছে। অনেক রপ্তানি আদেশ ফেরত দিতে হয়েছে।

অ্যাডাম অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল হক মুকুল বলেন, ভিয়েতনাম থেকে রপ্তানি আদেশ প্রত্যাহারের কারণ হিসেবে মার্কিন ক্রেতারা চীনকে এড়িয়ে যাচ্ছেন, যা ভিয়েতনামের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। নিকটবর্তী হওয়ার কারণে, চীনা উদ্যোক্তাদের বেশিরভাগ কারখানা ভিয়েতনামে। উপরন্তু, ভিয়েতনামের একটি ক্ষমতা সীমা আছে। এসব কারণে ভিয়েতনাম থেকে বাংলাদেশে রপ্তানির অর্ডার দিচ্ছেন ক্রেতারা।

তিনি বলেন, একটি ব্র্যান্ড তাকে সরাসরি ভিয়েতনামে একটি কারখানা খুলতে বলে। সম্প্রতি কিছু নতুন ক্রেতাও আসছেন। তারা এর আগে চীন ও ভিয়েতনামের সঙ্গে কাজ করেছে। কিছু ক্রেতা এর আগে তিনটি দেশেই রপ্তানির আদেশ দিয়েছিলেন। এখন সেই ক্রেতারা এখানে দ্বিগুণ রপ্তানির অর্ডার দিচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *