হত্যা মামলায় সাজা থেকে বাঁচতে ছদ্মবেশ নেন হেলাল: র্যাব
বগুড়ায় তিন খুনের ঘটনায় দায়ের করা মামলার পলাতক আসামি হেলাল হোসেন ওরফে সেলিম ফকির ওরফে বাউল সেলিম (৪৫)। এরপর থেকে নিজেকে আড়াল করতে ২০ বছর ধরে বাউল ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার অধিনায়ক খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
বুধবার কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশন থেকে হেলালকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, “হেলালের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যা মামলাই বগুড়ার আধিপত্য নিয়ে। সে বগুড়ায় একজন ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত ছিল। সে বগুড়ায় ১৯৯৭ সালের বিষ্ণু হত্যা মামলা এবং ২০০১ সালের বগুড়ার বিদ্যুৎ হত্যা মামলার পলাতক আসামি। বগুড়ায় ২০০৬ সালের রবিউল হত্যা মামলার আসামিও হেলাল।২০১০ সালে বগুড়া সদর থানায় দায়ের করা চুরির মামলায় ২০১৫ সালে গ্রেফতার হন।পরে ২০১১ সালে তার বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় নারী আইনে মামলা হয়। এবং শিশু নির্যাতন দমন আইন। ২০০০ সালে বগুড়া শহরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে হেলাল বাম হাতে দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে আহত হন। এতে তার বাম হাত অবশ হয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি লুলা হেলাল নামেও পরিচিত হন এলাকায় ।
র্যাবের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, “হেলাল এ পর্যন্ত তিনটি হত্যা মামলায় জড়িত। ২০০৯ সাল থেকে সে যেসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল তার তথ্য আমরা সহজেই পেয়েছি। তবে আগের তথ্যগুলো থানা থেকে সংগ্রহ করতে হবে। যখন আমরা তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করব তারা বিষয়টি দেখবেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হেলাল র্যাবকে জানায়, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে এলাকায় মুদির দোকান দেয়। পরে হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে সে। ২০১৫ সালে চুরির মামলায় জামিন পেয়ে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন। এরপর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে চট্টগ্রাম যান। সেখানে কয়েকদিন থাকার পর হেলাল ছদ্মবেশে কিছুদিন সিলেটে অবস্থান করেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রেলস্টেশন ও মাজারে ছদ্মবেশে নিজের নাম-পরিচয় গোপন রেখেছিলেন। ফেরারি প্রায় ৭ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করেছিল। হেলাল চার বছর ধরে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশনের কাছে এক নারীর সঙ্গে বসবাস করছেন। রেলস্টেশনে মানুষের সহযোগিতায় বাউল গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রায় পাঁচ বছর আগে কিশোর পলাশ ওরফে গামছা পলাশ নামে এক নির্মাতা নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনে একটি গানের শুটিং করছিলেন। শুটিং চলাকালে রেললাইনের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন এক বাউল (হেলাল)। এরপর শুটিং ডিরেক্টর তাকে একটি মিউজিক ভিডিওতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। হেলাল প্রস্তাব গ্রহণ করেন। পরে তাকে ‘ভাঙ্গা তরি চেরা পাল’ শিরোনামের একটি গানের মডেল হিসেবে দেখা যায়। গানটির ভিডিও ইউটিউবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এই গানটি প্রচার হলে বগুড়ার বিভিন্ন মানুষ তা দেখেছেন। পরে স্থানীয়রা জানান, এই গানের মডেল বগুড়ায় একাধিক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। ছয় মাস চেষ্টার পর বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই।