জাহাজে ৭ খুনের কারণ কি জানাল র্যাব
দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা না পাওয়া ও দুর্ব্যবহার করায় ক্ষোভে এমভি আল বাখেরা জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়াকে হত্যা করে গ্রেফতারকৃত আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফান। পরে জাহাজের অন্য সদস্যরা বিষয়টি ফাঁস করে দিতে পারে এমন আশঙ্কায় বাকি সাতজনকে গলা কেটে ও কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। এর মধ্যে মাস্টারসহ সাতজন মারা গেলেও জাহাজের পাইলট জুয়েল বেঁচে যান।
তবে এই খুনের আগে অভিযুক্ত ইরফান সবার খাবারের সঙ্গে দুই পাতা ঘুমের বড়ি মিশিয়ে দেয়। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানা গেছে বলে দাবি করেছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনিম ফেরদৌস।
বুধবার কুমিল্লায় এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১১ দাবি করে, জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়া ৮ মাস ধরে কোনো বেতন-ভাতা দেননি, এমনকি তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেছেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সবাইকে হত্যা করে আকাশ মন্ডল ওরফে ইরফান।
ইরফানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী র্যাব আরও দাবি করে, জাহাজের বিক্রয়কর্মী ইরফান পাবনার একটি বাজারে নেমেছিলেন। সেখান থেকে ৩ পাতা ঘুমের ওষুধ কিনে আনেন। আর যে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল তা আগেই জাহাজে ছিল। জাহাজের নিরাপত্তার জন্য কুড়ালটি রাখা হয়েছিল।
র্যাব আরও জানায়, ইরফান প্রথমে সবাইকে খাবারের সাথে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে। তারপর, গ্লাভস পরে, সে চায়নিজ কুড়াল দিয়ে সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর সবার মৃত্যু নিশ্চিত করে তিনি নিজেই জাহাজটি হাইমচর এলাকায় নিয়ে অন্য ট্রলারে করে পালিয়ে যান।
র্যাবের দাবি, মাস্টার গোলাম কিবরিয়াকে হত্যার সময় অন্যরা দেখেছে বলেই ইরফান তাদেরও হত্যা করেছে।
নিহতরা হলেন- মাস্টার গোলাম কিবরিয়া, গ্রিজার সজিবুল ইসলাম, লস্কর মাজেদুল ইসলাম, শেখ সবুজ, আমিনুর মুন্সি, ইঞ্জিনচালক সালাউদ্দিন ও রাঁধুনি কাজী। এ ছাড়া আহত ব্যক্তি হলেন সুকানি জুয়েল।
এর আগে চাঁদপুরের হাইমচরের মাঝিরচর এলাকায় এমভি আল বাকেরা জাহাজে সাত খুনের ঘটনায় ইরফানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। বাগেরহাট জেলার চিতলমারী থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গতকাল দায়ের করা মামলায় জানা গেছে, জাহাজে ৮ জন নয়, ৯ জন ছিলেন। আর ওই ব্যক্তি হলেন আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফান। কথা বলতে না পারা সুকানি জুয়েল এ তথ্য লিখেছেন।
পরে গতকাল জাহাজের মালিক মাহাবুব মোর্শেদ বাদী হয়ে সাতজনকে হত্যার ঘটনায় মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ডাকাত দলকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে জাহাজে নিহত ছয়জনের মরদেহ মঙ্গলবার বিকেলে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক মহসিন উদ্দিন ও নৌ-পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান। এ সময় জেলা প্রশাসন নিহতের স্বজনদের ২০ হাজার টাকার চেক এবং নৌ পুলিশ নগদ ১০ হাজার টাকা দেয়। তবে পরিবারের সদস্যরা না থাকায় বাবুর্চি রানা কাজীর লাশ হস্তান্তর করা হয়নি।