পাঠ্যবই বিলম্বে ছাপানোর কারসাজি প্রিন্টিং হাউসগুলোর, ৩১ জানুয়ারি সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে এনসিটিবি
প্রিন্টিং হাউস মালিকরা বিনামূল্যে পাঠ্যবই ছাপতে বিলম্ব করার চেষ্টা করছেন। এনসিটিবিকে না জানিয়ে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। যদিও পরে তারা তা প্রত্যাহার করে ক্ষমা চেয়ে নেয়। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে তাদের জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে এনসিটিবি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান জুনায়েদুল্লাহ আল মাহফুজ গত রোববার শিক্ষা উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়েছেন। এতে বলা হয়, ২০২৫ সালের পাঠ্যবই ছাপানোর জন্য ২৪ মার্চ পর্যন্ত সময় প্রয়োজন। এর আগে পাঠ্যবই ছাপানো সম্ভব নয়। একই সঙ্গে তিনি দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী জানুয়ারিতে বইয়ের ৫০ শতাংশ সরবরাহের শর্ত বাতিল করে বই ছাপার আগেই বিলের আংশিক পরিশোধের দাবি জানান।
চিঠিটি প্রকাশ্যে আসতেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবির কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। মন্ত্রণালয় এনসিটিবি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি নোট করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলেছে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে মুদ্রণ সমিতির নেতা ক্ষমা চেয়ে আগের চিঠি প্রত্যাহার করে নেন।
এনসিটিবি কর্মকর্তারা মনে করছেন, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণে বিলম্বের জন্য ছাপাখানার মালিকরা বিষয়টি নিয়ে কারসাজি করছেন। তবে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে গতকাল এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, তারা এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছেন এবং সব বই মুদ্রণ সমিতির কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ৩১ জানুয়ারি সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রেস মালিকদের একজন সদস্য শিক্ষা উপদেষ্টাকে যে চিঠি পাঠিয়েছেন তা কোনোভাবেই বৈধ নয়। আমরা গোয়েন্দা সংস্থা এবং অন্যান্য অংশীদারদের সহযোগিতায় তদন্ত করেছি এবং পাঠ্যপুস্তকগুলি সরবরাহ করতে সম্মত সময়ের চেয়ে বেশি সময় লাগবে না।
নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী, সকল প্রাথমিক বই এবং মাধ্যমিকের বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের বই ছাপিয়ে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্কুলে পৌঁছে দিতে হবে। এ ছাড়া মাধ্যমিকের আরও পাঁচটি বই ২০২৫ সালের ১০ জানুয়ারির মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে এবং বাকি সব বই। ২০ জানুয়ারির মধ্যে ।
তবে সমিতির চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক দাবি করেন, মুদ্রণ শিল্প সমিতির অফিসিয়াল প্যাডে এ ধরনের আবেদন করার বিষয়টি তাদের জানা ছিল না। এ বিষয়ে ক্ষমা চেয়ে শিক্ষা উপদেষ্টাকে চিঠিও দিয়েছেন তারা।
সমিতির সভাপতি মোঃ রব্বানী জব্বার বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে লিখিত আবেদনের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি বিষয়টির জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দিতে কাজ করছি।
সমিতির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান জুনায়েদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, চিঠির জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। কয়েকজন প্রেস মালিকের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ওই চিঠি দিয়েছি। প্রসঙ্গত, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বিতরণের জন্য প্রথম থেকে দশম শ্রেণির ৪০ কোটি ১৬ লাখেরও বেশি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে।