সাকিবের বিরুদ্ধে বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ
বিশ্বখ্যাত তারকা ক্রিকেটার ও সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, স্বর্ণ চোরাচালান, নিষিদ্ধ জুয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের টাকা আত্মসাৎসহ ব্যবসায়ী, ক্রিকেটে দুর্নীতি, নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য গোপন।
নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদক চেয়ারম্যানের কাছে দাখিল করা অভিযোগ সুনির্দিষ্ট এবং দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে দাবি করে অভিযোগকারী জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত করে সাকিবের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। অভিযোগের বিষয়ে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দুদকের তফসিলের আওতায় রয়েছে। এখন নিয়ম অনুযায়ী কমিশন অভিযোগটি যাচাই-বাছাই কমিটির কাছে পাঠাবে। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সূত্র জানায়, সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে দুদকে করা অভিযোগে ছয়টি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে ১০৪ কোটি টাকা আত্মসাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, অভিযোগটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তদন্ত করে যেখানে সাকিবের বিও অ্যাকাউন্টের লেনদেনের তথ্য ও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তিনি ফরচুন সুজ, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, ওয়ান ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, আইপিডিসি ফাইন্যান্স এবং বিডিকম অনলাইন লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির সাথে জড়িত বলে জানা গেছে।
শেয়ারবাজার কারসাজির নায়ক আবুল খায়ের হিরো গ্রুপের সদস্য সাকিব আল হাসানের কথা উল্লেখ করে অভিযোগে বলা হয়, তদন্তে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সাকিব ছাড়া অন্যদের শাস্তি দিয়েছে। আর্থিক ক্ষতিপূরণ সহ। এরপর সাকিবকে শুভেচ্ছাদূত হিসেবে না রাখার সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
নিষিদ্ধ জুয়া প্রতিষ্ঠানের সাথে সাকিব আল হাসানের সংশ্লিষ্টতার উল্লেখ করে, অভিযোগে আরও বলা হয়েছে যে তিনি বেটউইনার অনলাইন জুয়া প্রতিষ্ঠানের চুক্তিবদ্ধ ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ক্রিকেট এবং অন্যান্য গেম এবং ক্যাসিনো জুয়ার প্রচার করেছিলেন। সাকিব আল হাসান এই অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধের আয় নিজেই জমা করেন।
সোনা পাচারের অভিযোগও উঠেছে এই ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সূত্র ধরে বলা হয়, সাকিব তার ব্যবসায়িক অংশীদার রাশেক রহমানের সঙ্গে যোগসাজশে আইন ও বিধিবিধান না মেনে রিলায়েবল কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ও বুরাক কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কোম্পানির মাধ্যমে স্বর্ণের ব্যবসা করেন। সরকারি শুল্ক ও রাজস্ব এড়াতে অবৈধ সোনার ব্যবসা করে পাচারের অপরাধ করেছেন। এটি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের অধীনে একটি অপরাধ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, ২০১৬ সালে সাতক্ষীরার দাতিনাখালী এলাকায় আল হাসান এগ্রো ফার্ম নামে কাঁকড়ার খামার গড়ে তোলেন সাকিব আল হাসান। ওই খামারের জন্য বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সফট সেল কাঁকড়া সংগ্রহ করে প্রায় এক কোটি টাকার বকেয়া পরিশোধ করেননি তিনি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে তিনি অবৈধভাবে লাভবান হয়েছেন।
এদিকে, ২০১৯ সালে, ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব গোপন করার জন্য সাকিব আল হাসানকে আইসিসি দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল। এ ছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তার আয় গোপনের অভিযোগ উঠেছে। হলফনামায় তিনি মনাক মার্কের মালিকানা, পাওয়ার প্ল্যান্টের লাইসেন্স, পিপলস ব্যাংকের মালিকানা, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, ট্রাভেল এজেন্সি, হোটেল ব্যবসা, সোনা আমদানি, অনলাইন জুয়া খেলার সাইটের সঙ্গে সম্পর্ক, হোটেল হোয়াইটের ২০ হাজার বর্গফুট বাণিজ্যিক জায়গার মালিকানা দাবি করেছেন। কক্সবাজারে বালি, রেস্টুরেন্ট ব্যবসা, যুক্তরাষ্ট্রে স্ত্রীর নামে। হলফনামায় তিনি বাড়ি কেনার তথ্যসহ অন্যান্য বিষয় গোপন করেছেন।
সাকিব আমিনুলের মতো কষ্ট পাবেন না, আশ্বাস আইন উপদেষ্টার
সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে হত্যা মামলায় ফুটবলার আমিনুলের মতো ভুগতে হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সাকিবকে নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক লেখালেখি হলেও জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হকের মামলার সময় দেশের গণমাধ্যম নীরব ছিল। ২০০৩ সালের বিজয়ী জাতীয় ফুটবল দলের গোলরক্ষক, সাবেক অধিনায়ক এবং বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় আমিনুলের মামলা প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, এটা আওয়ামী লীগই শুরু করেছে, তাই না? আমিনুলকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন? আমিনুলকে জেলে পাঠানো হয়েছে, সাকিবের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে মাত্র।
আসিফ নজরুল বলেন, সাকিবকে যাতে আমিনুলের মতো ভোগান্তিতে পড়তে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হবে।