নিষিদ্ধ হওয়ার পর যা জানাল জামায়াত

0

সরকার জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবির নিষিদ্ধ করেছে। বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনের প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতের আমির ড. শফিকুর রহমান।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ড. শফিকুর রহমান বলেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ ও ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির’-এর রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তিনি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, ছাত্রদের অরাজনৈতিক আন্দোলন দমন করতে সরকার দলীয় ক্যাডার ও রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গণহত্যা চালিয়েছে। সরকারের এই গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন দেশের শিক্ষক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ।

বিশ্ব সম্প্রদায় এই হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানিয়েছে। সরকার তাদের অপকর্ম ধামাচাপা দিতে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ ও ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির’কে নির্বাহী আদেশ হিসেবে নিষিদ্ধ করে চলমান আন্দোলনের পথ মোড় নিতে চায়।

জামায়াতের আমির বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী আন্দোলন। জামায়াত স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করছে। দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবতার কল্যাণে জামায়াত ভূমিকা রেখেছে। জামায়াত দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। দেশে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে জামায়াত অংশগ্রহণ করেছে এবং নির্বাচিত ও সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় পরিচালনায়, সততা ও স্বচ্ছতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন জামায়াতের দুই মন্ত্রী। বন্যাসহ দেশের যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে জামায়াত সব সময় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।

ড. শফিকুর রহমান আরো বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জামায়াতের ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী জনগণকে ভোটাধিকার দেওয়ার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পথপ্রদর্শক। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে দেশে পরপর তিনটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণে ভূমিকা রেখেছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে গিয়ে জঙ্গিদের বোমা হামলায় প্রাণ হারান জামায়াতের ছয় নেতা। জামায়াতের সঙ্গে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের কোনো সম্পর্ক নেই।

তিনি বলেন, “সরকার গত ১৬ বছর ধরে জামায়াতের ওপর জুলুম-নির্যাতন করে আসছে। জামায়াত ধৈর্যের সঙ্গে সব পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে। ফলে জামায়াতের প্রতি মানুষের সহানুভূতি, ভালোবাসা ও সমর্থন বেড়েছে। জামায়াত কোটি মানুষের সংগঠন। সংবিধানে জামায়াত। বাংলাদেশ সকল নাগরিককে সমাবেশ ও সংগঠিত করার অধিকার দেয়।

ড. শফিকুর রহমান বলেন, “ইসলামের দাওয়াত, জনগণের চরিত্র সংস্কার এবং ইসলামের মহৎ আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা জামায়াতে ইসলামীর প্রধান কাজ সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও কখনো বন্ধ হবে না।” আমি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সকল স্তরের জনশক্তিকে ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর গণহত্যার দায় চাপানোর সরকারের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। একইভাবে সরকার বিভিন্ন ঘটনা ঘটিয়ে জামায়াতকে দায়ী করার চেষ্টা করতে পারে। এ ব্যাপারে সকল দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। সরকারের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।

জামায়াতের শীর্ষ নেতা বলেন, জামায়াতে ইসলামী ইসলামের আদর্শ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। যুগে যুগে ইসলামের কোনো আঘাতই এই আন্দোলনকে থামাতে পারেনি। বর্তমান সরকারসহ কারো দ্বারা ইসলামী আন্দোলন বন্ধ হবে না, ইনশাআল্লাহ। আমি দেশের প্রতিটি নাগরিককে সরকারের গণহত্যা, মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত, নিপীড়ন এবং “বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী” এবং “বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির” নিষিদ্ধ করার অসাংবিধানিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সাথে বাংলাদেশের ডামি সরকারের সকল অগণতান্ত্রিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসার জন্য বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশ, প্রতিষ্ঠান, মানবাধিকার সংগঠন ও সংস্থা এবং বিশ্বের বিবেকবানদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *