সান্ধ্য আইন মানাসহ রাবি প্রক্টর কার্যালয়ের ১৭ নির্দেশনা, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা
সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রতিটি হলে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর স্বাক্ষরিত নোটিশ টানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে প্রক্টর কার্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের সান্ধ্য আইন মেনে চলা, শীতকালে রাত ৯টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হলে প্রবেশ করতে দেওয়া এবং প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কোনো সংগঠনে যোগদান না করতে ১৭টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-৭৩-এ এসব নির্দেশনা উল্লেখ রয়েছে। তবে ‘সেকেলে’ এসব নির্দেশনা সম্বলিত নোটিশ প্রত্যাহার করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতারা।
তাদের দাবি, এসব নির্দেশনার বেশির ভাগই বর্তমানে কাজ করছে না। তারা বলছেন, প্রশাসন ক্ষমতা দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের কাজে লাগাতে পারবে। তবে প্রশাসন বলছে, শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার জন্য তারা এই আইনগুলোকে ‘মনে রাখছে’।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ ডিসেম্বর ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর লিয়াকত আলী স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ১১টি ও ছাত্রীদের ৬টি হলেই টানানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-১৯৭৩-এর বিভিন্ন ধারা ও উপ-ধারা নোটিশে থাকা ১৭টি নির্দেশনায় রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ স্নাতক প্রথম বর্ষের একটি পরিচিতি ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় আইনের নতুন শিক্ষার্থীদের ‘স্মরণ করিয়ে দিতে’ নোটিশ জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
কি আছে নোটিশে?
প্রক্টর কার্যালয় থেকে জারি করা উল্লেখযোগ্য কিছু নির্দেশনা হল: ছাত্ররা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, হল সংসদ এবং বিভাগীয় সমিতি ছাড়া কোনো ক্লাব বা সমিতি বা ছাত্র সংগঠন গঠন করতে পারবে না। প্রক্টরের পূর্বানুমতি ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সভা, পার্টি বা পার্টি বা বাদ্যযন্ত্র বাজানো যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য তিনি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম হবেন। হলের আবাসিক ছাত্রদের অবশ্যই নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি রাত ৯ টায় এবং বছরের অন্যান্য সময়ে রাত ১০ টা থেকে সকাল ৫টা পর্যন্ত তার কক্ষে থাকতে হবে। শিক্ষার্থীদের বাইরে থাকার প্রয়োজন হলে তা আবাসিক শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে হবে। হলের অধ্যক্ষের কাছ থেকে ছুটি না নিয়ে হলের শিক্ষার্থীরা অনুপস্থিত থাকতে পারবে না। ছুটি নিতে চাইলে অন্তত একদিন আগে প্রাধ্যক্ষের কাছ থেকে ছুটি নিতে হবে। ছাত্রর কক্ষে খাবার নেওয়া যাবে না। আপনি অসুস্থ হলেই রুমে খাবার নিতে পারবেন, তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে আবাসিক শিক্ষকের অনুমতি নিতে হবে। ছাত্রদের রাতের খাবারের পরে কল করতে হবে; ডিন যেকোন সময় এটি করতে পারেন, রোল কলের সময় শিক্ষার্থীদের তাদের নিজ নিজ কক্ষে থাকতে হবে। রোল কলের সময় কোনো শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলে আবাসিক শিক্ষক তার কাছে ব্যাখ্যা চাইবেন এবং আবাসিক শিক্ষক শিক্ষার্থীর ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হলে তিনি শাস্তি দেবেন এবং অধ্যক্ষকে রিপোর্ট করবেন। অনুমতি ছাড়া হলের ভেতরে কোনো সভা করা যাবে না।
শিক্ষার্থীদের সান্ধ্য আইন মেনে চলার নির্দেশ
প্রক্টরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা সান্ধ্য আইন মেনে শীতকালে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত এবং গ্রীষ্মকালে রাত সাড়ে ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত নিজ নিজ হলে অবস্থান করবেন। মার্চ থেকে অক্টোবর।
প্রক্টর কার্যালয়ের এ নির্দেশের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা। ছাত্রলীগ বলছে, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রশাসনকে নোটিশ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাবে। অনুরোধ না হলে আন্দোলনে নামবেন বলেও জানিয়েছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, “বর্তমানে এসব আইন মানা হয় না। সান্ধ্য আইন বর্তমান সময়ে চলে না। সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে মেয়েরা হলে প্রবেশ করবে, ছাত্রীরা হবে না।” যেকোনো সংগঠিত করতে সক্ষম। এই নির্দেশের দিন অনেক আগেই চলে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় একটি মুক্ত চিন্তার জায়গা। এখানে প্রত্যেকে তাদের জ্ঞান বিকাশের জন্য তাদের পছন্দের সংগঠন তৈরি করবে এবং কাজ করবে। সংগঠন ছাড়া ছাত্রদের মধ্যে নেতৃত্ব তৈরি হবে না। ফলে দেশে নেতৃত্বের সংকট দেখা দেবে।’
নোটিশ প্রত্যাহারের জন্য তারা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন এবং প্রশাসন তাদের অনুরোধ না মানলে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি দেবেন বলে জানান।
শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহব্বত হোসেন মিলন বলেন, “প্রশাসন অধ্যাদেশ ৭৩ এর নামে প্রতারণা করেছে। তারা সিনেট ও রাকসু নির্বাচন স্থগিত করে অধ্যাদেশের ডাক দিয়েছে। তারা নিজেরাই অধ্যাদেশকে বাইপাস করে এসেছে। অর্ডিন্যান্স বিরোধী পন্থায় প্রশাসনের কাছে।তাহলে কি শুধু ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণে অর্ডিন্যান্স ব্যবহার করা হবে?এই নোটিশ দিয়ে প্রশাসন ছাত্রদের নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করার পথ প্রশস্ত করার চেষ্টা করছে।তাই প্রশাসনের উচিত এই নোটিশ প্রত্যাহার এবং অবিলম্বে ক্ষমতা চাই.