রাসায়নিকসহ বিপজ্জনক পণ্যবাহী জাহাজে ভোগ্যপণ্য পরিবহন

0

দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে পণ্য পরিবহন জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। প্রচলিত নিয়ম না মেনে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিকসহ ক্ষতিকর পণ্যবাহী জাহাজে ভোগ্যপণ্য পরিবহন করা হচ্ছে। নিয়মানুযায়ী, সার, ক্লিংকার, কেমিক্যাল, কয়লার মতো পণ্য পরিবহনের পর লাইটারেজ জাহাজটি সম্পূর্ণ পরিষ্কার করার পরই, ভোগ্যপণ্য পরিবহনের অনুমতি দেওয়া হয়।

কিন্তু বিষয়টি ব্যয়বহুল ও কষ্টকর হওয়ায় নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়। সরকারি খাতে চাল ও গম পরিবহনের সময় কিছু নিয়মকানুন অনুসরণ করা হলেও বেসরকারি খাত নিয়ন্ত্রণহীনভাবে পরিচালনা করে।

বিষয়টি নিয়ে সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে লাখ লাখ টন ভোগ্যপণ্যসহ দেশের আমদানি বাণিজ্যের ৮০ শতাংশের বেশি হ্যান্ডলিং হয়। প্রতি বছরই এর পরিমাণ বাড়ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বড় বড় জাহাজে করে এসব পণ্য আমদানি করা হয়। তারা পণ্যটি বাহ্যিকভাবে ছেড়ে দেয়। কিছু জাহাজ বহির্নোঙরে সমস্ত মালামাল খালাস করে আবার বিদেশী পথে নিয়ে যায়। আবার কিছু জাহাজ বাইরের নোঙ্গরখানায় কিছু পণ্য খালাস করে এবং জাহাজের ড্রাফ্ট কমিয়ে বন্দর জেটিতে প্রবেশ করে। আবার বন্দরের জেটিতে থাকা জাহাজের ওভার সাইড থেকে বিপুল পরিমাণ পণ্য খালাস করা হয়। শুধুমাত্র লাইটারেজ জাহাজগুলি বাইরের অ্যাঙ্কোরেজ এবং জেটিতে থাকা জাহাজগুলির ওভারসাইড থেকে পণ্য খালাস করে। প্রচুর পরিমাণে সিমেন্ট ক্লিংকার ছাড়াও গম, সরিষা, সার এবং অন্যান্য পণ্য লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের বাইরের বার্থে বছরে এক কোটি টনের বেশি পণ্য পরিবহন হয়।

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে বন্দর চ্যানেলের বিভিন্ন ঘাট এবং ঢাকা, মিরপুর, নগরবাড়ী, বাঘাবাড়ি, নোয়াপাড়া, খুলনা, বরিশাল এসব জাহাজ পণ্য পরিবহন করে। চট্টগ্রামে সিইউএফএল এবং কাফকো দ্বারা উত্পাদিত সারের একটি অংশ লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে বিসিআইসি নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন জেলার গুদামে পরিবহন করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনে প্রায় ১৮০০ লাইটারেজ জাহাজ রয়েছে।

এসব জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে কর্ণফুলী নদীর ১৬টি ঘাট এবং ঢাকা, মিরপুর, নগরবাড়ী, বাঘাবাড়ি, নোয়াপাড়া, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহন করে। দেখা যায় সার বা কয়লা বহনকারী জাহাজগুলো খোলা গম বা কাঁচা চিনি নিয়ে ছুটছে পরের যাত্রায়। সিমেন্ট ক্লিঙ্কার পরিবহনের পরপরই অন্যান্য ভোগ্যপণ্য জাহাজে বোঝাই হতে দেখা যায়।

খাদ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, ভোগ্যপণ্য পরিবহনের জন্য কোনো ডেডিকেটেড লাইটারেজ নেই। রাখাও সম্ভব নয়। অতএব, আগের ট্রিপে সার, কয়লা বা ক্লিঙ্কার পরিবহন করা লাইটারেজ জাহাজগুলি প্রধানত গম, সরিষা, ভুট্টা, ছোলা এবং অন্যান্য ডাল বা কাঁচা চিনি নিয়ে যায়। নিয়ম অনুযায়ী এসব জাহাজকে খুব ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে পরবর্তী ভ্রমণের জন্য প্রস্তুত করার কথা। যাতে পরবর্তী ট্রিপের পণ্যে আগের রাসায়নিক বা অন্যান্য পণ্যের স্পর্শ না লাগে। কিন্তু জাহাজ ধোঁয়া পরিষ্কার করা কঠিন এবং ব্যয়বহুল। তাই জাহাজের মালিক এবং ক্রুরা পরিবর্তে জাহাজটিকে পরবর্তী ভ্রমণের জন্য কার্গো লোড করতে পাঠায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *