উপকূলীয় নারীরা জীবিকার সন্ধানে সুন্দরবনে চিংড়ি আহরণ

0

সুন্দরবন পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। এই উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ মানুষই কোনো না কোনোভাবে এসব বনের ওপর নির্ভরশীল। সারা বছর বনের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী-নালায় মাছ ধরা, মাছ সংগ্রহ, মাছ ধরে এবং শুটকি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে লাখ লাখ মানুষ।

নিরন্তর সংগ্রামের মধ্যে থাকতে হয় উপকূলের মানুষকে। দুই মুঠো খাবার জোগাড় করতে নারী-পুরুষ দিনরাত সংগ্রাম করে। বেশিরভাগই তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয়। নোনা পানিতেও রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। তা সত্ত্বেও সাতক্ষীরা উপকূলের ১৫-২০ হাজার নারী জীবিকার সন্ধানে সুন্দরবনের নদী থেকে চিংড়ি আহরণ করছেন।

কর্মসংস্থানের অভাবে এসব নারীরা ঝুঁকি নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কখনও বাঘ আবার কখনও কুমিরের আক্রমণের শিকার হতে হয়। তাছাড়া দীর্ঘদিন লবণ পানিতে থাকার কারণে এসব নারীর জরায়ুসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যা হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

মৎস্য অধিদপ্তর বলছে, সমুদ্রগামী জেলেদের সহায়তা করা হলেও সুন্দরবনে জেলেদের জন্য কোনো সহায়তার ব্যবস্থা নেই। তবে সুন্দরবনের জেলেদের ভিজিএফের আওতায় আনা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়ন এবং পার্শ্ববর্তী পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সীগঞ্জ ও রমজান ইউনিয়নের অন্তত ১০ হাজার নারী প্রতিদিন সুন্দরবনের নদী-নালা থেকে চিংড়ি সংগ্রহ করে।

সুন্দরবন সংলগ্ন চকবাড়া গ্রামের গৃহবধূ আকলিমা খাতুন ও খাদিজা বেগম জানান, বনে বাঘ ও পানিতে কুমির জানা সত্ত্বেও তারা ৮-১০ বছর ধরে উপ-গ্রীষ্মমন্ডলীয় খোলপেটুয়া নদী থেকে চিংড়ি আহরণ করে আসছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা নদীর এক পাড় থেকে অন্য পাড়ে জাল টেনে দেড়শ থেকে ২০০ টাকা আয় করে, যা তাদের পরিবারকে সহায়তা করছে।

এলাকায় চিংড়ি থাকার কারণে তেমন চাষাবাদ হয় না। এ কারণে উপকূলীয় এলাকার পুরুষরা চাকরি হারিয়ে দিন দিন বেকার হয়ে পড়ছে। শ্যামনগর গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিএম মাকসুদুল আলম বলেন, সুন্দরবনের উপকূলীয় এলাকায় লাখ লাখ মানুষ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। গাবুরা ইউনিয়নের অন্তত ৪ হাজার দরিদ্র নারী সুন্দরবনের খোলপেটুয়া, কপোতাক্ষ ও কালিঞ্চি নদী থেকে চিংড়ি ও মাছের খোসা আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। রেনু পোনা আহরণ করতে গিয়ে অনেকেই বাঘ ও কুমিরের আক্রমণের শিকার হয়েছেন।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিচুর রহমান জানান, সাগরে যাওয়া জেলেদের সহায়তা করা হলেও সুন্দরবনে জেলেদের জন্য কোনো সহায়তার ব্যবস্থা নেই। তবে সুন্দরবনের জেলেদের ভিজিএফের আওতায় আনা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *