কক্সবাজারের আরও ৬৮টি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
শনিবার কক্সবাজার সফরে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনসহ ১৪টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৪টি নতুন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। আর শেষের আগেই আরও ৬৮টি রুটি প্রকল্পের উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার কার্যত এসব প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন তিনি
যেখানে, একক পয়েন্ট মুরিং স্কিম (এসপিএম)। প্রকল্পটি উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আমদানিকৃত জ্বালানি তেল পরিবহন ও বিতরণে একটি নতুন প্রযুক্তি সংযোগ স্থাপন করেছে। একই সঙ্গে ৪৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র, ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে।
একক পয়েন্ট মুরিং স্কিম (এসপিএম)। আমদানিকৃত জ্বালানি তেল পরিবহন এবং বিতরণে একটি নতুন প্রযুক্তি। কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়ায় ৮ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটি মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী কার্যত উদ্বোধন করবেন বলে নিশ্চিত করেছেন প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. শরীফ হাসনাত।
তিনি জানান, মঙ্গলবার সকাল ১০টায় এর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে।
জ্বালানি বিভাগের তথ্যে জানা গেছে, মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের উপকল থেকে ছয় কিলোমিটার পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) বসানো হয়েছে। ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের দুটি পৃথক পাইপলাইনের মাধ্যমে এসপিএম থেকে অপরিশোধিত তেল এবং ডিজেল আনলোড করা হবে।
পাইপলাইনটি প্রথমে ১৬ কিলোমিটার পেরিয়ে কালারমারছড়ার CSTF বা পাম্প স্টেশন এবং ট্যাঙ্ক ফার্মে আনা হবে। সেখান থেকে তেল বিভিন্ন পাম্পের মাধ্যমে ৭৪ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে আনোয়ারার উপ-সাগরে যাবে। সেখান থেকে ৩৬ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল নিয়ে যাওয়া হবে পতেঙ্গায় ইআরএলের শোধনাগারে। এই পাইপলাইনের ধারণক্ষমতা ২০ হাজার টন। এসপিএম থেকে মহেশখালী পর্যন্ত ২০০,০০০ টন স্টোরেজ ধারণক্ষমতা তৈরি করা হয়েছে যেখানে পাম্পগুলি পাম্প করা হবে। এর মধ্যে অপরিশোধিত তেল হবে ১ লাখ ২৫ হাজার টন। বাকি ৭৫ হাজার টন ডিজেল হবে।
এই প্রকল্পের শুরুতে ১৯১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। পার্বতীতে এটি ৯০ একরে নেমে আসে। সেখানে তিনটি পরিশোধিত এবং তিনটি অপরিশোধিত তেল সংরক্ষণের ট্যাঙ্কসহ অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। আমদানি করা তেল স্টোরেজ ট্যাঙ্কে সংরক্ষণ করা হবে। প্রতিটি পরিশোধিত স্টোরেজ ট্যাঙ্কারের ধারণক্ষমতা ৬০,০০০ ঘনমিটার এবং অপরিশোধিত স্টোরেজ ট্যাঙ্কারের ক্ষমতা ৩৫,০০০ কিউবিক মিটার।
স্টোরেজ ট্যাঙ্ক ছাড়াও এই প্রকল্পের অভ্যন্তরে তিন ও দুই তলা বিশিষ্ট ১৮টি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আটটি অগমেন্টেশন বিল্ডিং, দুটি ইলেকট্রনিক এবং একটি আবাসিক ভবন। বাকিগুলো গুদাম, ক্লাব হাউস এবং ফায়ার সার্ভিস স্টেশন।
এছাড়াও প্রকল্পের অভ্যন্তরে চেক ভালভ স্টেশন, পিগিং স্টেশন, মিটারিং স্টেশন, স্কাডা, মেইন ও বুস্টার পাম্প, জেনারেটর, সিকিউরিটি সিস্টেম এবং ফায়ার ভেহিকল, ফায়ার ওয়াটার নেটওয়ার্ক, পাম্প ও ওয়াটার স্টোরেজ সুবিধাসহ ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম রয়েছে।
অন্যদিকে নিরাপত্তায় ১৩টি ওয়াচ টাওয়ার, দুটি তিনতলা গেট ও চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া। বর্তমানে জার্মানি এবং চীনে ৫০ জন প্রকৌশলী কাজ করছেন। যদিও প্রকল্পের শুরু থেকে ৫-৬ শতাধিক বিদেশি নাগরিক কর্মরত ছিলেন।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বলছে, বর্তমানে দেশে আড়াই মাসের তেল মজুদ ক্ষমতা রয়েছে। এসএমপিএম প্রকল্প চালুর মাধ্যমে ধারণক্ষমতা ১৫ দিন থেকে আড়াই মাস বাড়ানো হবে। অন্যদিকে ১১ দিনের পরিবর্তে মাত্র ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টায় তেল ছাড়া হলে সরকারের বছরে ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
জ্বালানি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি ইস্টার্ন রিফাইনারি বছরে দেড় লাখ টন অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করতে পারে। এসপিএম প্রকল্পটি ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় ইউনিট। এটি চালু হলে পরিশোধন ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে সাড়ে চার লাখ টনে।
২০১৫ সালে নেওয়া এই প্রকল্পটি তিন বছরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনটি সংশোধনের মাধ্যমে প্রকল্পের মেয়াদ ৩০ জুন পর্যন্ত ছিল। কিন্তু পুরোপুরি প্রস্তুত না হওয়ায় চার দফা সংশোধন করে মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। আর ব্যয় বেড়েছে ১ হাজার ২১৭ কোটি টাকা। প্রকল্পের মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা।
এসপিএম প্রকল্পটি বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে G2G ভিত্তিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে বৈদেশিক সহায়তা দিচ্ছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) অধীনে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (সিপিপিইসি) ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন (ইপিসি) প্রকল্পের ঠিকাদারের দায়িত্বে রয়েছে। জার্মানি ভিত্তিক আইএলএফ কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে।
এই প্রকল্পে সৌদি আরব থেকে আমদানি করা দেশের বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল (অশোধিত তেল) জাহাজটি ২৪ জুন পৌঁছেছে। এবং এই প্রকল্পের উদ্বোধন করা হচ্ছে।