বিশ্ব নদী দিবস: নদীকে স্বীকৃতি দিতে ভিন্ন পথে দুই সংস্থা

0

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন গত মাসের ৯ তারিখে দেশের নদ-নদীর খসড়া তালিকা তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। তালিকা অনুযায়ী দেশে নদীর সংখ্যা ৯০৭টি। অন্যদিকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নদীর সংখ্যা নিয়ে একটি প্রকল্প সম্পন্ন করেছে। পাউবো সূত্র জানায়, তাদের মতে নদীর সংখ্যা আট লাখ থেকে সাড়ে আট লাখ পঞ্চাশ হাজারের মধ্যে হতে পারে।

সরকারি দুটি সংস্থার তালিকায় নদীর সংখ্যা কাছাকাছি হলেও কাজের পদ্ধতিতে পার্থক্য রয়েছে। তবে নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদীর সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। এ জন্য নদীর সঠিক সংজ্ঞা নির্ধারণ ও তালিকা প্রণয়নের প্রক্রিয়া বিজ্ঞানসম্মত হতে হবে।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব নদী দিবস।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আজ রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের নদী: সংজ্ঞা ও সংখ্যা সেমিনার’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ উপলক্ষে কমিশনের নদ-নদীর তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে।

নদী রক্ষা কমিশনের তালিকা

খসড়া কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, সিলেট বিভাগে দেশের সর্বোচ্চ সংখ্যক নদী রয়েছে, ১৫৭টি। ময়মনসিংহ বিভাগে ১৪৫টি, খুলনায় ১২৮টি, ঢাকায় ১২৫টি, রংপুরে ১২১টি, বরিশালে ১০০টি এবং রাজশাহী বিভাগে ৭০টি জীবন্ত নদী রয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগে সবচেয়ে কম নদী আছে, ৬১টি। একাধিক বিভাগে ৩০টি নদী রয়েছে। তালিকায় সবচেয়ে বড় নদী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ইছামতি নদীকে। খুলনা বিভাগের চারটি জেলার ১০টি উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীর দৈর্ঘ্য ৩৩৪ কিলোমিটার।

নদীর তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের ৫ হাজার ভূমি অফিস, ৫ হাজার এসি ল্যান্ড অফিস, ৬৪টি জেলা প্রশাসক—সকলেই তালিকা তৈরির সঙ্গে জড়িত।

‘তিনি বলেন, তালিকা তৈরির জন্য ১৮৮০ থেকে ১৯৪০ সালের সিএস (ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে) মানচিত্রকে ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এ ছাড়া আরএস (রিভিশনাল সার্ভে) মানচিত্রের সময় নদীটি কোথায় ছিল এবং এখন কোথায় রয়েছে তাও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

তালিকাটি কমিশনের ওয়েবসাইটে খোলা হয়েছে এবং এ বিষয়ে কারো মতামত বা আপত্তি থাকলে তা লিখিতভাবে কমিশনকে জানাতে বলা হয়েছে। এ পর্যন্ত কতটি আপত্তি জমা পড়েছে এবং নিষ্পত্তি হয়েছে তার সঠিক সংখ্যা জানাতে পারেননি কমিশনের চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, “আমরা কিছু আপত্তি নিষ্পত্তি করেছি, কিছু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কেউ যাই বলুক না কেন, যতক্ষণ না ডিসি বলছেন এটি নদী, এটি নদী নয়। কারণ অনেকেই পানি দেখলে নদীর কথা ভাবেন। আমরা তা করি না। হঠাৎ এনজিওর মতো বলার সুযোগ আছে।

মনজুর আহমেদ আরও বলেন, “কিছু আপত্তি দাখিল করা হয়েছে, যা বাস্তবসম্মত নয়। একজন ১০৫টি আপত্তি দিয়েছে। আমরা দেখেছি যে খালকে নদীও বলা হয়। আমরা আপত্তিগুলো ডিসির কাছে পাঠিয়েছি। তাদের কাছে সব তালিকা, রেকর্ড রয়েছে। তারা কি বলে।

তবে ডিসিদের কাছে এই তালিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নদী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইনুন নিশাত। তিনি বলেন, প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে নদী হয় না। নদীর জন্য কত বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রয়োজন হবে? নদীর সংজ্ঞার ভিত্তি পৃথিবীর সর্বত্র একই হওয়া উচিত। তা না হলে বিজ্ঞানের প্রয়োজন নেই, প্রশাসনের সঙ্গে বিজ্ঞান পরিচালনা করতে হবে। সিএস মানচিত্র প্রশাসনের জন্য। ব্রিটিশরা জমিদারদের এলাকা নির্ধারণ করে। একটি নদীর সংজ্ঞা প্রশাসনিক কাজের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু প্রকৃতি বোঝা প্রশাসনিক বিষয় হতে পারে না।

কমিশনের দেওয়া নদীর সংখ্যা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে তিনি বলেন, আমার মনে হয় বাংলাদেশে নদীর সংখ্যা দুই থেকে তিন হাজার হবে। সিলেটের চা বাগানের দুই পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর নাম থাকলে তাকে নদী বলব। এক্ষেত্রে খুব বড় নদী, বড় নদী, মাঝারি নদী, ছোট নদী, খুব ছোট নদী ও স্রোত এই শ্রেণীতে ভাগ করতে হবে। প্রতিটি স্রোত একটি প্রাকৃতিক নদী।

আইনুন নিশাত বলেন, ‘নদী সুরক্ষা কমিশন সম্পূর্ণ ভুল এবং তাদের পদ্ধতিতে দেশকে বিপথগামী করবে। তিন জার্মান বিশেষজ্ঞ তিন বছর ধরে সুন্দরবনের সাড়ে তিন হাজার নদীর মানচিত্র তৈরি করেছেন৷ এখন নদী রক্ষা কমিশন গ্রহণ না করলে আপনি অনেক নদীকে ডাকতে পারবেন না।’

পাউবোরে নদীর তালিকা ও প্রক্রিয়া

পাউবো সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে পাউবো নদীর সংখ্যা গণনার কাজ শুরু করে। তারপর রিমোট সেন্সিং ডেটা মেথড বা রিমোট সেন্সিং পদ্ধতি ব্যবহার করে স্যাটেলাইট ইমেজের ভিত্তিতে নদীগুলো চিহ্নিত করা হয়। সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করে, ২০০৫ সালে ৩১০টি নদী প্রথম শনাক্ত করা হয়েছিল। ২০১১ সালে, পাউবো ৪০৫টি নদীর একটি তালিকা প্রকাশ করে, প্রধানত রিমোট সেন্সিং ডেটা এবং কিছু ফিল্ড-লেভেল ডেটা বিশ্লেষণ করে।

বর্তমানে, পাউবো এই পদ্ধতিতে এবং মাঠ পর্যায়ের যাচাইকরণের উপর সমান জোর দিয়ে নদীগুলিকে পুনরায় উদ্ভাবন করছে। এ প্রকল্পের পরিচালক পাউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রবীন কুমার বিশ্বাস বলেন, এবার নদীর সংখ্যা বাড়বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *