স্থানঃ ঢামেক হাসপাতাল।”টাকায় তো আর কুলায় না ভাই”ডেঙ্গুর সঙ্গে খরচের বোঝা
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ডিএমএইচ) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে রয়েছে ৬-৭টি ডাবের দোকান। এতে রোগীর স্বজনদের জটলা লেগে যায়। কেউ প্লাস্টিকের বোতলে বোতলজাত পানি, আবার কেউ দোকানদারদের দেওয়া পলিথিনে। জানা গেছে, হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ডাবের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আর এ উপলক্ষে প্রতি ডাবের দাম রাখছেন ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। গতকাল সকালে গাজীপুরের বাসিন্দা আতাউর রহমান এক আত্মীয়ের কাছে ১০ হাজার টাকা ধার চাইছিলেন।
সাংবাদিক পরিচয় দিতে গিয়ে তিনি বলেন, গাজীপুরে একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। তার সামান্য আয় দিয়েই ঘর ভাড়া এবং সংসারের খরচ মেটে। ফলস্বরূপ, দ্রব্যমূল্যের এই বৃদ্ধির সময় মাসের শেষে খুব কমই কোনও টাকা অবশিষ্ট থাকে। এর মধ্যে ৯ আগস্ট থেকে ছেলের জ্বর। প্রথমে ছেলের রক্ত পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু ডেঙ্গু নেগেটিভ আসে। কিন্তু জ্বর কমছিল না। তাই চতুর্থ দিন পর আবার পরীক্ষা করলে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। রক্তের প্লাটিলেট কমেছে ৬০ হাজারে। তাই ছেলেকে ভর্তি করা হয়েছে ডিএমকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে। ডাক্তার বলেছেন ছেলেকে ডাবের পানি ও স্যুপসহ ভালো খাবার খাওয়াতে। কিন্তু ভালো খাবার কেনার সামর্থ্য নেই। ৫ হাজার টাকা নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন, তা শেষ। তাই আবার ধার করার চেষ্টা করছি।
আরেক রোগীর আত্মীয় আফরোজা জানান, তাদের বাড়ি যাত্রাবাড়ীর কাজলায়। তার ভাই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। চার দিন ধরে হাসপাতালের ষষ্ঠ তলায় চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। প্রতিদিন দুই থেকে তিন ক্যান পানি ও স্যুপ খাওয়ান। আফরোজা বলেন, আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ। বড় ভাই কাজ করে আমাদের দুই বোনকে পড়ায়। উপার্জনকারী ভাই এখন অসুস্থ। তাই আমি আমার ভাইকে ডাক্তার যা খাওয়াতে বলেছে তাই খাওয়াচ্ছি। কিন্তু আমি আর টাকা পয়সার চিন্তা করি না ভাই। তাই ধার দিচ্ছি।
এদিকে গতকাল ডিএমকে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে-বাইরে, করিডোরে, মেঝে সবখানেই ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ওয়ার্ডে পা রাখার জায়গা নেই। রোগীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। ঢাকা ছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকেও রোগী আসছেন। ফলে চাপ বাড়াতে সাধারণ ওয়ার্ডে চলছে ডেঙ্গুর চিকিৎসা।
শিশু ওয়ার্ডে কর্মরত একজন নার্স জানান, সুস্থ রোগীদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে এবং প্রতিদিন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে। কোন শয্যা পাওয়া যায় না. আমরা যতটা সম্ভব রোগীদের চিকিৎসা করছি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, এ বছর তারা রেকর্ড সংখ্যক ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা করেছে। বিশেষ করে গত তিন মাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক রোগী ভর্তি হচ্ছেন। রোগীদের চাপ সামলাতে করিডোরে, সিঁড়ির নিচে, লিফটের সামনে বিছানা দেওয়া হচ্ছে। আবার কেউ কেউ চাটাই বা চাদর পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক জানান, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ডেঙ্গু রোগী আসছে। আমরা সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। রোগীর চাপ বেশি থাকায় শারীরিক অবস্থা কিছুটা ভালো হলে রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।