চট্টগ্রামে জাহাজ ভাঙ্গা কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা

0

ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে চারটি শিপইয়ার্ডে ভ্যাট কমিশনের অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে জাহাজ ভাঙা শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিপব্রেকার অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ) অনির্দিষ্টকালের জন্য শিপইয়ার্ড বন্ধ ঘোষণা করেছে। বুধবার সকাল থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে। বিএসবিআরএর সচিব নাজমুল ইসলাম শিপব্রেকিং কারখানা বন্ধের ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অভিযান চালানো কারখানাগুলো হলো প্রিমিয়ার ট্রেড কর্পোরেশন, এসএন করপোরেশন, ভাটিয়ারী স্টিল শিপব্রেকিং ইয়ার্ড ও মাহিনুর শিপব্রেকিং ইয়ার্ড।

বিএসবিআরএর সহকারী সচিব নাজমুল ইসলাম বলেন, ভ্যাট ও শুল্ক সংক্রান্ত কোন রেকর্ডপত্র পরিক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন মনে করলে কর্তৃপক্ষ যে কোনো সময় ইয়ার্ড মালিকদের কাছ থেকে চাইতে পারেন। কিন্তু মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের তিনটি দল বিনা নোটিশে সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারিতে শিপইয়ার্ডের অফিসে অভিযান চালিয়ে ইয়ার্ড অফিস থেকে আগ্রাবাদের ভ্যাট অফিসে গিয়ে কিছু রেকর্ড, রেজিস্টার ও কম্পিউটার নিয়ে যায়। এমনকি প্রচারের নামে অফিসের সবকিছু তছনছ  করে ফেলে।

” কাস্টমস, এক্সাইজ এবং ভ্যাট কমিশনারেটে এই ধরনের ঘটনায় আমরা হতবাক ” ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে সীতাকুণ্ডের সব জাহাজ ভাঙার কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে বিএসবিআরএ। যার কারণে সকাল থেকে আমাদের শিপইয়ার্ডের সব কারখানা থেকে জাহাজ কাটা, স্ক্র্যাপ বিক্রি, সরবরাহসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

মঙ্গলবার রাতে বিএসবিআরের জরুরি বৈঠকের এক বিবৃতিতে বলা হয়, আমদানি করা স্ক্র্যাপ জাহাজ সমুদ্রের বাইরের তীরে পৌঁছানোর পর কাস্টমস রামেজিং টিম সরেজমিন জাহাজ পরিদর্শন করে শুল্ক নির্ধারণ করে। সেই নির্ধারিত কাস্টমস ইয়ার্ডগুলিতে, জাহাজ নির্মাণের আগে অগ্রিম অর্থ প্রদান করা হয়। এছাড়াও, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), সম্পূরক শুল্ক ইত্যাদি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চালানের আগে অগ্রিম প্রদান করে। তাই এক্ষেত্রে ভ্যাট ও শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই। ইয়ার্ড মালিকরা প্রতি আর্থিক বছরে কর, ভ্যাট এবং ট্যাক্সের মাধ্যমে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা সরকারি রাজস্ব প্রদান করে।

উল্লেখ্য, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ বা অন্য কোনো বিধান লঙ্ঘন করে কোনো ইয়ার্ড মালিক কোনো পণ্য বা সেবা সরবরাহ করেনি। অতএব, উল্লিখিত পণ্য বা পরিষেবার বিধান সম্পর্কিত নথি, রেকর্ড, কম্পিউটার বাজেয়াপ্ত করা যুক্তিযুক্ত নয়। বিএসবিআরএ মনে করছে, সংশ্লিষ্ট ইয়ার্ড মালিকদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে।

ভ্যাট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গঠিত একটি টিমের কথিত অসদাচরণের ফলে সরকারী খাতে কোটি কোটি টাকা পরিশোধ করা ইয়ার্ড মালিকদের অন্যায়ভাবে হয়রানি করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে মালিকদের শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ এবং ইয়ার্ড মালিকদের ব্যবসায়িক সুনাম রক্ষার্থে বাংলাদেশ শিপব্রেকার অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন জব্দকৃত রেকর্ড, রেজিস্ট্রার ও কম্পিউটার স্ব স্ব ইয়ার্ড কর্তৃপক্ষকে ফেরত প্রধান সহ টিমের অন্যায় আচরণের গ্রহনযোগ্য ও ন্যায়সঙ্গত প্রতিকারের দাবি জানানো হচ্ছে। অন্যথায় ইয়ার্ড মালিকদের ন্যায্য অধিকার এবং জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের টিকে থাকার স্বার্থে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন যেকোনো ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্ত নেবে।

তবে এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার হাসান মুহাম্মদ তারেক রিকাবদারকে সেলফোনে যোগাযোগ চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া জায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *