সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ। পরনের কাপড়ে চেনা গেল মরদেহটি সেলিমের

0

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড সীমা অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণে পাঁচজনের পরিচয় নিশ্চিত হলেও একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। বিস্ফোরণে মুখ সম্পূর্ণ বিকৃত হয়ে যায়। জামাকাপড় রক্তে রঞ্জিত। যার কারণে অনেকে দেখতে আসলেও লাশ শনাক্ত করতে পারেনি। পরে ওই ব্যক্তির লাশ মর্গে রাখা হয়।

এদিকে খোঁজাখুঁজির পরও স্বামীর কোনো হদিস না পেয়ে রোববার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল মর্গে ছুটে যান লিলি মারাথ। মর্গে এসে লাশ পরা শার্ট দেখে লিলি মারাঠ হাউমাউ করে বলতে থাকে- ‘ইনি আমার স্বামী সেলিম রিচিল।’

সেলিম রিচিল নামে একটি সংখ্যালঘু নৃ-গোষ্ঠী সীমার কারখানার শ্রমিক ছিলেন। বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। বিস্ফোরণের খবর পেয়ে তার স্বজনরা কখনো কারখানায়, কখনো আশপাশের এলাকা ও স্থানীয় মেডিকেল সেন্টারে ছুটে আসেন। তারা তার অনেক সহকর্মী এবং পরিচিতদের সাথে দেখাও করেছেন। কিন্তু সেলিমকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। নিখোঁজ সেলিমের স্ত্রী লিলি মারাথ কোথাও না পেয়ে রোববার চমেক হাসপাতালে ছুটে যান।

পুলিশ ও হাসপাতাল প্রশাসনকে জানানোর পর স্বামীর সন্ধান না পাওয়ায় তাকে হাসপাতালের ফ্রিজারে নিয়ে যাওয়া হয়। আর সেখানে গেলে ঘটনার দিন সকালে পরিহিত শার্ট দেখে সেলিমের লাশ শনাক্ত করেন। বিলাপ করার সময় লিলি মারাথ বলেন, ‘বিস্ফোরণে তার মুখ বিকৃত হলেও আমি তার স্ত্রী। আমাকে আর কেউ চিনতে না পারলেও তার গায়ের জামাটা আমি চিনবো। শার্টটি তার প্রিয় ছিল। ওইদিন ওই শার্ট পরেই তিনি কারখানায় যান। আমার কি হল? আমার সন্তানরা এখন কাকে বাবা বলবে? কার কাছ থেকে পাবে বাবার আদর-স্নেহ?

৩৮ বছর বয়সী সেলিম রিচিলের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলায়। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সীতাকুণ্ডে ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। তার সামান্য আয় দিয়েই চলত পুরো পরিবার। স্ত্রী লিলি মারাঠের বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নারায়ণহাট এলাকায়।

সেলিম রিচিলের এক সহকর্মী জানান, ঘটনার আগে কারখানা থেকে তার কয়েকজন সহকর্মী পাশের একটি দোকানে নাস্তা করতে গেলে তাকে চলে যেতে বলে। কিন্তু সেলিম বের হননি। সেলিম তার সহকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, এখনো কিছু কাজ বাকি আছে। সেগুলো শেষ করে চলে যাচ্ছি। আর তখনই ঘটে বিস্ফোরণ। আমাদের সঙ্গে বের হলে এত বড় বিপদ হতো না। এখন সেলিম কাকে বলা হবে? জিনিস শেয়ার করবেন?

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান জানান, নিহত ছয়জনের সবার পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত সেলিম রিচিলসহ সর্বশেষ শনাক্তকৃতরা হলেন- শামসুল আলম (৫০), মোঃ ফরিদ (৩৬), রতন লক্রেট (৪৫), আব্দুল কাদের (৫০) ও মোঃ সালাহউদ্দিন (৩৫)। এ ঘটনায় আহত ১৮ জন হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন আইসিইউতে রয়েছেন।

চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল আলম আশেক জানান, আহতদের মধ্যে মো. রিপন ও নূর হোসেন নামের দুইজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *