সংঘর্ষে জড়িয়ে বিপদগ্রস্তদের আরও  বিপদে ফেলল ছাত্ররা

0

পুরনো বিরোধের জেরে গতকাল আবারও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা। সংঘর্ষের একপর্যায়ে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় পুলিশ দুই পক্ষকে সরিয়ে দিতে গেলে শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। মিরপুর সড়ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। এ ঘটনার পর ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ তিনদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে।

গতকাল সকালে সায়েন্স ল্যাব এলাকায় সংঘর্ষে অনেক মানুষ জড়িত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তাদের মতে, বিস্ফোরণের আশঙ্কায় শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর কথা থাকলেও তা না করে তালগোল পাকিয়ে দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। বিস্ফোরণ ও পরবর্তী সংঘর্ষের কারণে মিরপুর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিপাকে পড়েছেন বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা।

এদিকে প্রতিবছর ঈদের আগে ঢাকা কলেজ এলাকায় সংঘর্ষের পেছনে ছাত্রনেতাদের আধিপত্য ও চাঁদাবাজি রয়েছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ছাত্রনেতারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নিউমার্কেট জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহেন শাহ বলেন, সংঘর্ষ নয়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়েছে। মৃদু পদক্ষেপে, পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

পুলিশ ও শিক্ষার্থী সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা কলেজের সঙ্গে আইডিয়াল অ্যান্ড সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরোধ পুরনো। বিভিন্ন সময় কটূক্তি বা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। প্রায়শই তা ধাওয়া এমনকি মারামারিতে পরিণত হয়। গত সোমবার ঢাকা কলেজের একদল শিক্ষার্থী আইডিয়াল কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করে। এর জের ধরে বৃহস্পতিবার ঢাকা কলেজের একটি বাস ভাঙচুর করে আইডিয়ালের শিক্ষার্থীরা। দুই পক্ষ একে অপরকে ধাওয়া করে। গতকাল সকাল থেকেই কলেজ দুটির শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্থানে জড়ো হতে থাকে। দুপুর ১২টার দিকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় আইডিয়ালে যোগ দেন সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশ আইডিয়ালের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে পাঠায়। বেলা ৩টার দিকে ঢাকা কলেজের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে আবারও লাঠিসোঁটা নিয়ে আইডিয়ালের দিকে হাঁটতে দেখা যায়। এ পর্যায়ে কলেজ ছাত্রলীগের নেতাদের উৎসাহে অনার্স-মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরাও রাস্তায় নেমে আসে। পুলিশ তাদের তাড়ানোর চেষ্টা করে। পরে তারা ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি গাড়ি ভাংচুর ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে সবাইকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এদিকে, ভবনে বিস্ফোরণ ও দফায় দফায় সংঘর্ষের কারণে দীর্ঘক্ষণ মিরপুর সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। এতে ওই সড়কসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘক্ষণ থেমে থাকতে হয় বিভিন্ন গন্তব্য থেকে আসা যাত্রীদের। অনেকে পরিবহন থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেন। সংঘর্ষের কারণে এলাকার বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিকাল ৪টা পর্যন্ত তাদের দোকানপাট বন্ধ রাখতে হয়। নিউমার্কেট এলাকার এক ব্যবসায়ী জানান, শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের কারণে মাঝেমধ্যে দোকান বন্ধ রাখতে হয়। দিনের পর দিন এসব ঘটনায় বিরক্ত তারা।

এর আগে গত বছরের এপ্রিলে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ হয়। স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রতিবছর ঈদের আগে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নানা কারণে সংঘর্ষ হয়। ছাত্রনেতারা পেছন থেকে এসব বিরোধ উস্কে দেন। এর মাধ্যমে তারা আধিপত্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। কারণ ঈদকে ঘিরে রয়েছে বিপুল পরিমাণ চাঁদাবাজি। এক্ষেত্রে যার গোষ্ঠীর প্রভাব ও প্রতিপত্তি বেশি, সে বেশি অর্থ পায়।

ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রহমত উল্লাহ বলেন, এবার একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাইরের কোনো বিষয় নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে। এর কোনো কলেজ বা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। তিনি দাবি করেন, চাঁদাবাজি অতীতে হলেও এখন সবাই ‘ক্লিন ইমেজের’ নেতা।

ঢাকা কলেজ তিন দিন বন্ধ : সংঘর্ষের জেরে তিন দিন ঢাকা কলেজ বন্ধ রয়েছে। গতকাল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ ইউসুফ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনিবার্য কারণে আগামী ৬ মার্চ কলেজের সব ক্লাস স্থগিত করা হবে। দোলযাত্রা উপলক্ষে ৭ মার্চ এবং শবে বরাত উপলক্ষে ৮ মার্চ। ৮ মার্চ ছাড়া আগের দুই দিন অফিস ও বিভাগ খোলা থাকবে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাসহ সব কার্যক্রম যথারীতি চলবে। তবে ঢাকা কলেজের সকল অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা স্থগিত থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *